পড়ুয়াদের টানে বাঁধা পড়লেন প্রধান শিক্ষক

যাঁকে নিয়ে এমন আবেগ, গোপালনগরের পাল্লা কালীপদ চক্রবর্তী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের, তিনি প্রধান শিক্ষক লিটন বিশ্বাস। তাঁর বদলি হয়ে যাচ্ছে জানতে পেরেই শনিবার আবেগঘন এমন দৃশ্যের সাক্ষী থাকল স্কুল।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৫
Share:

যেতে-দিব-না: গোপালনগরে। ছবি: সীমান্ত মৈত্র

অনুরোধে কাজ হচ্ছে না বুঝতে পেরে ততক্ষণে পড়ুয়ারা ঘরের মেঝেতে শুয়ে পড়েছে। স্যারকে কিছুতেই স্কুল ছেড়ে যেতে দেবে না তারা।

Advertisement

যাঁকে নিয়ে এমন আবেগ, গোপালনগরের পাল্লা কালীপদ চক্রবর্তী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের, তিনি প্রধান শিক্ষক লিটন বিশ্বাস। তাঁর বদলি হয়ে যাচ্ছে জানতে পেরেই শনিবার আবেগঘন এমন দৃশ্যের সাক্ষী থাকল স্কুল।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লিটনবাবুর বাড়ি মধ্যমগ্রামে। আট বছর আগে তিনি ওই স্কুলে কাজে যোগ দেন। যাতায়াতে অনেকটা সময় বেরিয়ে যায়। ফিরতেও রাত হয়। শরীর-স্বাস্থ্যও ভাল যাচ্ছে না। লিটনবাবুর কথায়, ‘‘পরিবারকে একেবারেই সময় দিতে পারি না। তাই বাড়ির কাছের স্কুলে বদলির জন্য ডিসেম্বর মাসে শিক্ষা দফতরে আবেদন করেছিলাম।’’ জানুয়ারি মাসেই বদলির নির্দেশ চলে আসে। নতুন স্কুলটি তাঁর বাড়ি থেকে মাত্র দশ মিনিটের পথ।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে খুশিই ছিলেন লিটনবাবু। কিন্তু পুরনো স্কুলের পড়ুয়াদের আবেগের সামনে দৃশ্যতই এ দিন বিহ্বল ওই শিক্ষক। ছাত্রছাত্রীদের অনেকেরই তখন চোখে জল। লিটনবাবু তাঁদের বলেন, ‘‘তোদের এত ভালবাসা ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারি? কোথাও যাব না। এখানেই থাকব।’’

মুহূর্তের মধ্যে কান্না বদলে যায় স্বস্তিতে।

স্কুলের মধ্যে যখন পড়ুয়ারা তাদদের প্রিয় স্যারকে আটকাতে ব্যস্ত, স্কুল গেটের বাইরেও তখন কয়েকশো অভিভাবক ভিড় করেছেন। পড়ুয়ারা কোনও ভাবে ব্যর্থ হলে তাঁরাই আসরে নামতেন বলে পরে জানালেন কেউ কেউ। শনিবার ছিল স্কুল পরিচালন সমিতির বৈঠক। পড়ুয়া ও অভিভাবকদের মনে হয়েছিল, বৈঠকেই লিটনবাবুর স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সে কারণেই সকলে জড়ো হয়েছিলেন।

প্রধান শিক্ষককে আটকানোর এত চেষ্টা কেন?

পড়ুয়াদের পক্ষে মৌসুমী টিকাদার, সংগ্রাম বিশ্বাস, শিপ্রা বিশ্বাস বলে, ‘‘প্রধান শিক্ষক আমাদের সঙ্গে নিজের ছেলেমেয়ের মতো ব্যবহার করেন। খুব ভাল পড়ান। যে কোনও সমস্যায় সাহায্য করেন। ওঁকে আমরা কিছুতেই ছাড়ব না।’’ স্কুলের শিক্ষক পার্থসারথি দে-র কথায়, ‘‘লিটনবাবু আসার পরে থেকে স্কুলে অনেক উন্নতি হয়েছে। স্কুল চালানোর দক্ষতাও ওঁর অসাধারণ। স্কুলের স্বার্থেই ওঁর থাকা উচিত।’’ ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে তাঁরা নিশ্চিন্ত থাকেন বলে জানালেন অভিভাবকেরা।

লিটনবাবু সিদ্ধান্ত বদল করায় স্কুলে তখন খুশির হাওয়া। কে যেন রসগোল্লা-সন্দেশ নিয়েও হাজির হয়ে গিয়েছেন।

মিষ্টি-পর্ব সেরে প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম বাড়ির কাছের স্কুলে যেতে পারলে ছাত্রদের আরও ভাল ভাবে পড়াতে পারব। শারীরিক কষ্টও কম হত। কিন্তু এখানে সকলের এত ভালবাসা ছেড়ে কোথাও যাওয়া হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement