মনোরম: গোছানো স্কুল চত্বর। নিজস্ব চিত্র
ঝাঁ চকচকে অডিটোরিয়াম। মিড ডে মিলের রান্নার সুব্যবস্থা, মেয়েদের ন্যাপকিনের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে উন্নত শৌচাগার, আবার রয়েছে পর্যাপ্ত পানীয় জল। জিমন্যাশিয়াম, ল্যাবরেটরি, ফল ও ফুলের বাগান তো আছেই। রয়েছে কবিরাজি গাছের বাগান। মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের এমন সাজানো পরিকাঠামো দেখে বিস্মিত এলাকার মানুষ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্য মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলির অবস্থা এতটাই খারাপ যে পঠনপাঠন শিকেয় উঠতে চলেছে। সেখানে ১৯৪৮ সালে স্থাপিত এই স্কুলের এমন উন্নয়ন হল কী করে?
প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘স্কুলের উন্নয়ন না করলে স্কুলছুটের সংখ্যা হয়তো বাড়ত। সমাজে শিক্ষার হার কমত। তা মেনে নিতে পারেনি আমার মন। সে কারণেই প্রচেষ্টা চালাই।’’
চন্দনবাবু জানান, ইন্টারনেট থেকে কখনও সরকারি বা বেসরকারি, কখনও কোনও বিদেশি সংস্থা বা কোনও ব্যক্তির কাছে টাকার আবেদন করা হয়েছিল। তাতেই সাড়া মিলেছে। স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য রাজ্যসভার সাংসদ শচিন তেন্ডুলকরের ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও টাকা পেয়েছে ওই স্কুল। সরকারি সাহায্যের ভরসায় না থেকে যে স্কুলের উন্নয়ন করা সম্ভব, তার নমুনা রয়েছে কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের পরিকাঠামোয়।
স্কুল ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন জেলায় মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৮০টি। অধিকাংশ স্কুলের পরিকাঠামোর অভাবে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে।
সরকারি সাহায্য ছাড়াই কী ভাবে স্কুলে উন্নয়ন করা যায় তা নিয়ে সম্প্রতি মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলে একটি শিবিরের আয়োজন করে জেলা পরিষদ। শিবিরে জেলার ৮০টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
মগরাহাট গোকর্ণী মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষিকা সাধনা দত্ত বা উস্তির বীরেশ্বরপুর নজরুল সুকান্ত মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক নুর আহমেদ মোল্লা জানালেন, সত্যিই কৃষ্ণচন্দ্রপুর স্কুলের পরিকাঠামো দেখে সকলে অবাক। কিছু সরকারি সাহায্যে এবং প্রধান শিক্ষকের চেষ্টায় এত বড় স্কুল ভবন হয়েছে। আরও নানা উন্নয়ন হয়েছে।
তাঁদের কথায়, ‘‘চেষ্টা করব যাতে আমরাও আমাদের স্কুলগুলিকে এ ভাবে সাজাতে পারি।’’ চন্দনবাবু সকলকে পরামর্শ দিয়েছেন, সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে স্কুলের উন্নয়নের জন্য টাকার ব্যবস্থা করতে ঝাঁপাতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকেই।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, চতুর্থ শ্রেণি পাশ করার পর কয়েক কিলোমিটার দূরের স্কুলে পড়তে যেতে হয় ছাত্রছাত্রীকে। এই কারণে বেশির ভাগ পড়ুয়াই স্কুল ছেড়ে দেয়। বিশেষ করে ছাত্রীদের অভিভাবকেরা দূরের কোনও স্কুলে পড়তে পাঠাতে চান না। সে কারণেই স্কুলছুট কমাতে ১৯৯০ সালে রাজ্যের প্রতিটি জেলা পরিষদ থেকে বিভিন্ন এলাকায় মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওইটুকুই। তারপর থেকে স্কুলগুলি আর সাজানো গোছানো হয়নি। ফলে দিনের পর দিন স্কুলভবনের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষক-শিক্ষিকাও কম। সরকারি সাহায্য মিলছে না দেখেই এই হাল স্কুলগুলির বলে অভিযোগ। এত সবের মধ্যেও ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছে কৃষ্ণচন্দ্রপুরের স্কুলটি।