ময়না তদন্তের জন্য টাকা নেই পরিবারের হাতে

দেহ আটকে রেখে হেনস্থা

মৃতের পরিবারের দাবি, দেহ নিয়ে এলে প্রথমে হাসপাতাল থেকে বলা হয় যে, রবিবার হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হবে না। অভিযোগ, এরপরে দেহ রাখার জন্য মর্গের কর্মী টাকা চান। এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পর ময়নাতদন্ত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ০২:৪৬
Share:

অপেক্ষা: বরফ কেনার পর। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার

দু’হাজার টাকা দিতে না পারায় একটি মৃতদেহ আটকে রেখে ৬ ঘণ্টা হেনস্থা করা হল মৃতের পরিবারকে—এমনই অভিযোগ উঠল কাকদ্বীপ হাসপাতালে।

Advertisement

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যখন পরিষেবা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার, তখন খোদ সরকারি হাসপাতালের মর্গেই মৃতদেহ নিয়ে ব্যবসার অভিযোগ উঠছে। যদিও অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর পুলিশের তত্ত্বাবধানে দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। কিন্তু তারপরেও মৃতের মাথা সেলাই করাতে টাকা দিতে হয়েছে পরিবারটিকে।

মৃতের পরিবারের দাবি, দেহ নিয়ে এলে প্রথমে হাসপাতাল থেকে বলা হয় যে, রবিবার হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হবে না। অভিযোগ, এরপরে দেহ রাখার জন্য মর্গের কর্মী টাকা চান। এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পর ময়নাতদন্ত হয়েছে। কিন্তু এর জন্য গুনে গুনে টাকা দিতে হয়েছে মৃতের পরিবারটিকে।

Advertisement

মৃতের পরিবারের এই হেনস্থার কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘রবিবার ময়নাতদন্ত না হওয়ার কোনও কারণ নেই। দেহ কাটা এবং সেলাই ডাক্তারেরই করার কথা। দেখছি, কোথায় গোলমাল হল!’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুরে ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল থানা এলাকায় ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় কার্তিক মণ্ডলের। দ্বারিকনগর হাসপাতালে দেহ নিয়ে এলে তা মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। ররিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দেহটি আসে কাকদ্বীপ হাসপাতালের পুলিশ মর্গে। অভিযোগ, সেখান থেকে মৃতের পরিবারকে বলা হয়, রবিবার ময়নাতদন্ত হয় না।

কোনও উপায় না দেখে দেহটি মর্গে রাখার অনুরোধ করের মৃতের আত্মীয়েরা। অভিযোগ, এ জন্য ২ হাজার টাকা চান মর্গের কর্মী (ডোম) মদন মল্লিক। মৃতের দাদা গোবিন্দবাবুর দাবি, ‘‘আমি নিজে দিনমজুর। দেহ আনতেই টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল। কোনও রকমে তা-ও ৫০০ টাকা এবং বরফ এনে দিই।’’ কিন্তু তাতেও মন গলেনি ওই কর্মীর।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ছ’মাস ধরে খারাপ মর্গের ঠান্ডা রাখার মেশিন। সে কারণে মৃতের পরিবারের কাছ থেকেই বরফের খরচ তোলা হয়। অভিযোগ, বরফ কিনে দেওয়ার পরেও মৃতের পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন মদনবাবু। এরপর মৃতের পরিবার কাকদ্বীপের সিআই দফতরে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে পুলি‌শের হস্তক্ষেপে শুরু হয় ময়নাতদন্ত। কিন্তু তারপর ফের দেহের সেলাই করা নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। পরিবারের অভিযোগ, সেলাই করতে ফের টাকা দাবি করেন মদনবাবু। শেষ পর্যন্ত তাঁর হাতে ১২০০ টাকা দিয়ে দেহ ফেরত নিতে বাধ্য হন তাঁরা। কিন্তু মর্গে ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও কেন মর্গের কর্মী মাথার খুলি সেলাই করবে?

মদনবাবুর দাবি, সরকারি ডাক্তাররা খুলি বা দেহে ময়না তদন্তের জন্য কাটলে সেলাই করেন না। তা ডোমকেই করতে হয়। তার জন্যই টাকা চাওয়া হয়েছে। মদন বলেন, ‘‘পাঁচ মাস হল মাইনে পাইনি। আমার ২৪ ঘণ্টা ডিউটি, কোনও ছুটি নেই। কী ভাবে আমার চলবে? তাই দেড় হাজার টাকা চেয়েছি।’’

সরকারি পুলিশ মর্গে ডোমদের নিয়োগ করে স্বরাষ্ট্র দফতর। কিন্তু এখানে মর্গ চালু হলেও সরকারি ভাবে ডোম নিয়োগের নির্দেশ আসেনি বলে প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এই সময় তাঁর বেতন রোগীকল্যাণ সমিতির তহবিল থেকে হওয়ার কথা। তাহলে কেন ৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না ওই কর্মী?

কাকদ্বীপ হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‘ডোমের মাইনের বিষয়টি জানা ছিল না। জেলাশাসকের সঙ্গে বসে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলা যায় কিনা দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন