চড়া রোদ উপেক্ষা করেই চলছে প্রচার

গায়ে ভেজা জামা। হাতে একটি ভিজে তোয়ালে। এক হাতে ঘাম মুছতে মুছতেই ভোট চাইছেন প্রার্থী। গনগনে রোদে হাঁটতে হাঁটতে কাহিল হলেও জিরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই সঙ্গীসাথীদের।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১১
Share:

প্রচারের ফাঁকে আখের রস খাচ্ছেন বাদুড়িয়ার বিজেপি প্রার্থী দেবিকা মুখোপাধ্যায় ও ডাবের জলে গলা ভেজাচ্ছেন কংগ্রেস প্রার্থী আবদুর রহিম দিলু। নিজস্ব চিত্র।

গায়ে ভেজা জামা। হাতে একটি ভিজে তোয়ালে। এক হাতে ঘাম মুছতে মুছতেই ভোট চাইছেন প্রার্থী।

Advertisement

গনগনে রোদে হাঁটতে হাঁটতে কাহিল হলেও জিরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই সঙ্গীসাথীদের। তাঁরাও ঘর্মাক্ত কলেবরে ঠা ঠা রোদে পাল্লা দিয়ে ছুটছেন প্রার্থীর সঙ্গে।

বেলা বাড়লে রোদের তাপ বাড়ছে। কত আর সকাল সকাল কাজ সারা যায়, তাই প্রখর দারুণ দিনেই প্রচারে আক্ষরিক অর্থেই গা ঘামাচ্ছেন সব দলের প্রার্থীরা।

Advertisement

চৈত্রের মাঝামাঝি এমন গরম বড় একটা দেখেনি এ বঙ্গ। কিন্তু ঠান্ডা ঠান্ডায় আর কবে ভোট হয়েছে। কাজেই সে সব না ভেবে আপাতত প্রচারেই মন দিচ্ছেন প্রার্থীরা।

গরম উপেক্ষা করে দেখা গেল প্রচারে বেরিয়েছেন বসিরহাট দক্ষিণের জোট প্রার্থী, কংগ্রেসের অমিত মজুমদার। হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মধ্যেই বোতল থেকে নুন-লেবুর জল খোচ্ছিলেন। সঙ্গে থাকা অনেক কর্মীর হাতেও দেখা গেল লেবুর জলে-ভরা বোতল।

দীপেন্দু বিশ্বাস এমনিতে শক্তপোক্ত। ফুটবলার হিসাবে তাঁর কেরিয়্যার বড় কম আকর্ষণীয় নয়। অন্যদের তুলনায় শারীরিক ভাবে মজবুত তরুণ এই প্রার্থীও অবশ্য গরমে গলদগর্ম হচ্ছেন। অস্বস্তি ঢাকতে কয়েক মিনিট ছাড়া ছাড়াই তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছছিলেন। লিকার চা ছাড়া আর তেমন কিছু মুখে তুলছেন না প্রচারে বেরিয়ে। তবে কর্মীরা বারণ করলেও সুযোগ পেয়ে আইসক্রিম খেয়ে ফেললেন অমিত, দীপেন্দু। তাঁর প্রচারে থাকা এক কর্মী মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘সর্দিগর্মি হয়ে গেলে প্রচারের দফারফা হবে দাদা!’’

বাদুড়িয়ার কংগ্রেস প্রার্থী কাজি আবদুর রহিম দিলুর বাবা গফ্ফর সাহেব বাদুড়িয়ার নয় বারের বিধায়ক ছিলেন। বার্ধক্যজনিত কারণে এখন বড় একটা বেরোন না। প্রার্থী হয়েছেন তাঁর ছেলে। সেই আবদুর রহিম দিলুর মতে, ‘‘রাজনৈতিক যুদ্ধ বলে কথা। আমি একটু হালকা দিলেই সেই ফাঁকে অন্য দলের প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে পৌঁছে যাবেন। তাই গরম-টরম নিয়ে এখন ভাবার সময় নেই। তাঁর প্রচারের মাঝে সঙ্গী ডাব এবং আখের রস।

কড়া রোদের মধ্যেই একের পর এক মিছিল করছেন বাদুড়িয়ার তৃণমূল প্রার্থী আমির আলি। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং বিদ্যুৎকর্মী আমিরের নেশা কবিতা লেখা। যেখানেই যাচ্ছেন তাঁর দিকে খাতা-পেন বাড়িয়ে দিয়ে একটা কবিতা লিখে দেওয়ার আবদার আসছে। রোদে হাঁটতে হাঁটতে কপালের ঘাম মুছে সেই আবদার রাখছেনও।

বসিরহাট দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, “যত হাঁটতে পারবে, তত বেশি বাড়িতে পৌঁছনো যাবে। গরম কোনও ফ্যাক্টরই নয়।”

বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের এটিএম আব্দুলা রনির জানালেন, গরমে আরাম পেতে বাড়ি থেকে ২-৩টি করে বাড়তি পোশাক নিয়ে বেরোচ্ছেন তিনি। গরম এড়ানোর জন্য স্বরূপনগরের তৃণমূল প্রার্থী বীণা মণ্ডল, মিনাখাঁর উষারানি মণ্ডল ভোর ৫টা থেকে বেলা ১১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচার চালাচ্ছেন। তেষ্টা মেটাতে প্রার্থীদের হাতে ঠান্ডা জলের বোতল, সরবত, হেলথ ড্রিঙ্কসও দেখা যাচ্ছে।

চাঁদি ফাটা রোদে ভোট প্রার্থীদের এই পরিশ্রম দেখে সাধারণ মানুষ কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না।

এক তরুণ ভোটারের কটাক্ষ, ‘‘নেতা-কর্মীরা যে ভাবে পরিশ্রম করছেন, তার অর্ধেকেরও কম যদি ভোটের পরে দেখা যায়, তা হলে এলাকার ভোল বদলে যাবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন