রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে ইমারতি দ্রব্য। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে বনগাঁ-চাকদহ সড়ক। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশ-প্রশাসনের উদাসীনতা, যান চালকদের বেপরোয়া ভাবে তীব্র গতিতে গাড়ি চালানো, রেষারেষি, রাস্তার পাশে বেআইনি পার্কিং— এ সবকেই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করছেন সাধারণ মানুষজন। রাস্তার ধারে ইমারতি দ্রব্যও পড়ে থাকতে দেখা যায়। দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে প্রতি মুহূর্তে।
গত কয়েক মাসে শুধু মাত্র গোপালনগর থানা এলাকাতেই বনগাঁ-বাগদা সড়কে দুর্ঘটনায় কয়েক জন জন মারা গিয়েছেন। জখম হয়েছেন জনা তিরিশ।
রাস্তার উপরে বা পাশে রাখা আছে বালি, ইট, পাথর, খোয়া, গাছের গুঁড়ি, মাটির স্তূপ। সড়ক দখল করে দাঁড়িয়ে আছে সারিসারি পণ্য-বোঝাই ট্রাক। আছে অটো স্ট্যান্ড। ঝাঁ চকচকে চওড়া সড়কে এমনিতেই বাড়ছে যানবাহনের চাপ। তার উপরে সড়ক দখল হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে আকছার।
এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘‘বড় ঝাঁ চকচকে সড়ক তৈরি করে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। উল্টে বেড়েছে দুর্ঘটনা। সড়ক দখল হয়ে যাওয়ায় রাস্তাটি ফের সরু হয়ে গিয়েছে। এমনিতে ওই সড়কে যানবাহনের গতি খুবই বেশি থাকে। কিন্তু সড়ক দখল হয়ে যাওয়ায় চালকেরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন।’’
বছর ছ’য়েক আগে বেহাল সরু বনগাঁ-চাকদহ সড়ক সম্প্রসারণ করে ঝাঁ চকচকে বড় রাস্তা তৈরি করা হয়। বনগাঁ থেকে নদিয়ার চাকদহ পর্যন্ত প্রায় ৩৩ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়। তার আগে পর্যন্ত ওই রাস্তা যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সড়কটি ফের সরু হয়ে গিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়কের পাশে ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না।
বনগাঁ থেকে গোপালনগরের কদমতলা পর্যন্ত সড়কের প্রায় ১৭ কিলোমিটার অংশ উত্তর ২৪ পরগনার জেলার মধ্যে পড়ে। বাকিটা নদিয়া জেলার অন্তর্গত। সড়ক পথে দুই জেলার মানুষের যাতায়াতের অন্যতম রাস্তা এটি। বনগাঁ, বাগদা গোপালনগরের বহু মানুষ যশোর রোডের যানজট এড়াতে ওই সড়ক ধরে বারাসত বা কলকাতায় যান। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পণ্যভর্তি ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরে যায় বনগাঁ-চাকদহ সড়ক ধরেই। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ যান চালক সকলের কাছেই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয় কানসোনা এলাকার বাসিন্দা দুলাল দাস এবং নারায়ণ মালাকার ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন, ‘‘প্রাণ হাতে নিয়ে যাতায়াত করতে হয় আমাদের। কোনও সুরক্ষা বলে কিছু নেই। দুর্ঘটনা নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ মরছে। জখম হচ্ছে। অথচ রাস্তার পাশ থেকে ট্রাক সরানো হচ্ছে না।’’ এমনকী, লোকের বাড়ির সামনেও দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রাক। ফলে গেট দিয়ে মানুষের যাতায়াত করতেও অসুবিধা হচ্ছে। প্রায়ই ট্রাক চালকদের সঙ্গে গণ্ডগোল বাধছে।
বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় নতুন সুসংহত চেকপোস্ট তৈরি হয়েছে তার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পণ্য রফতানির কাজ শুরু হলে ওই সড়কে ট্রাক দাঁড়ানোর প্রবণতা কমানো সম্ভব। বিষয়টি নিয়ে শুল্ক দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’’ পাশাপাশি বিকল্প একটি ট্রাক টার্মিনাস তৈরি করা গেলেও সমস্যা মেটানো যাবে বলে জানান তিনি।