মাটি মাফিয়াদের দাপট

ভাঙছে বিদ্যাধরী নদীর পাড়

ভোর থেকেই শ’খানেক নৌকা হাজির হয় বিদ্যাধরীর মাটি কাটতে। বহু মানুষের জীবিকা জড়িয়ে বেআইনি এই কাজে। দেগঙ্গার বেলিয়াঘাটা সেতু থেকে বিদ্যাধরী নদীর পাশ দিয়ে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার রাস্তা।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:২৫
Share:

অবাধে চলছে মাটি কাটা। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

যত দূর চোখ যায় নদীর দু’পাড় বরাবর ইটভাটার সারি। বেশির ভাগেরই লাইসেন্সের বালাই নেই। অবৈধ ইটভাটায় মাটির জোগান আসছে নদীপাড়ের পলিমাটি কেটে।

Advertisement

বারাসত ও দেগঙ্গায় বিদ্যাধরী নদীর পাড়ে গেলেই দেখা যাবে নৌকো করে নদীর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি মাফিয়ারা। এদের দাপটে ক্রমশ ভাঙছে বিদ্যাধরীর পাড়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন নির্বিকার। ইটভাটার মালিকদের সহযোগিতায় ফুলে-ফেঁপে উঠছে মাটি মাফিয়ারা।

ভোর থেকেই শ’খানেক নৌকা হাজির হয় বিদ্যাধরীর মাটি কাটতে। বহু মানুষের জীবিকা জড়িয়ে বেআইনি এই কাজে। দেগঙ্গার বেলিয়াঘাটা সেতু থেকে বিদ্যাধরী নদীর পাশ দিয়ে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার রাস্তা। নদীতীরের মাটি কেটে নেওয়ায় সেই রাস্তার পাড় ভাঙছে। সেচ দফতর থেকে নদীর পাড় বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা সওকত আলি বলেন, ‘‘সরকার নদীপাড় বাঁধাতে টাকা খরচ করে। অথচ মাটি কাটায় নিষেধ করে না! বোঝাই যাচ্ছে, মাটি কাটায় এক রকম সহযোগিতাই করছে প্রশাসন।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রাখাল পাত্র অবশ্য বলেন, ‘‘বারবার বারণ করা সত্ত্বেও মাটি কাটা কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।’’

বারাসত, দেগঙ্গার মৌলপোতা, তেঘাটা, আবাদ ও তেলিয়া গ্রাম থেকে ভোর হতেই তিন-চারশো নৌকো নদীতে ভেসে পড়ে। টাকি রোডের বেলিয়াঘাটা সেতু থেকে রেল সেতু পর্যন্ত বিদ্যাধরীর পাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় পৌঁছে দেয় ওই সব নৌকো। মাটি শ্রমিকেরা জানালেন, একটি নৌকায় চারজন করে থাকেন। কয়েক ঘণ্টায় ৩-৪ নৌকো-বোঝাই মাটি কাটা হয়ে যায়। ইটভাটা থেকে এক নৌকা মাটির দাম মেলে ৮০০-৯০০ টাকা। এই ভাবে দিনে নৌকো-পিছু আয় প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা। আর একজন শ্রমিকের দিনে আয় প্রায় হাজার টাকা।

কম সময়ে এত টাকা সহজে উপার্জন হওয়ায় এই কারবারের রমরমা ক্রমশ বাড়ছে। আর, ইটভাটাগুলিও সহজেই কম টাকায় মাটি পেয়ে যাচ্ছে।

বছরখানেক আগে মাটি কাটা বন্ধ করতে তৎপর হয়েছিল পুলিশ এবং প্রশাসন। তারপর বেশ কিছু দিন বন্ধ ছিল মাটি কাটা। অভিযোগ, সেই নজরদারি উঠে গিয়েছে। দেগঙ্গা ১ পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল রউফ বলেন, ‘‘নদীর মাটি কাটা নিয়ে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

মাটি কাটা নিয়ে দেগঙ্গা থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বলা হয়েছে, এখনই এটা বন্ধ না হলে বিদ্যাধরীর ভাঙন রোধ অসম্ভব হয়ে পড়বে।

কী ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ?

উত্তর ২৪ পরগনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাটি কাটার খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়। আর অবৈধ ভাটাগুলিতে বেআইনি ভাবে মাটি কাটার যে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে, তার তদন্তও চলছে।’’

পুলিশ যদি সক্রিয়ই আছে, তারপরেও মাটি কাটা চলছে কাদের মদতে, প্রশ্ন তুলছেন এলাকার মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন