পরিষ্কার হয় না ভ্যাট। নিজস্ব চিত্র।
পচাগলা দেহ থেকে শুরু করে শহরের সমস্ত আর্বজনা ফেলা হচ্ছে ভ্যাটে। সেটাই দস্তুর। কিন্তু বসতি এলাকার কাছেই সেই ভ্যাট নিয়মিত পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধে ওই এলাকায় টিঁকতে পারছেন না মানুষ। ব্লিচিংটুকু পর্যন্ত ছড়ানো হয় না নিয়মিত। একে তো দুর্গন্ধ। তার উপরে দূষণও ছড়াচ্ছে ভ্যাট। পথচারীরা কোনও মতে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে দ্রুত পায়ে পেরিয়ে যান রাস্তাটুকু। ভ্যাটটি সরানোর জন্য প্রশাসনের সব স্তরে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ডায়মন্ড হারবার পুরসভায় ১৬টি ওয়ার্ড আছে। বছর পনেরো আগে আর্বজনা ফেলার জন্য পুরসভা উদ্যোগে প্রায় দু’বিঘা জমির উপরে একটি বড় ভ্যাট নির্মাণ করা হয়েছিল। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা পুরসভা-লাগোয়া কানপুর-ধনবেড়িয়া পঞ্চায়েতে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের দলনঘাটা মোড়ের কাছে ভ্যাটটির অবস্থান। সে সময়ে ওই ভ্যাট নির্মাণের প্রতিবাদে এলাকার বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। এলাকাবাসীর দাবি ছিল, পুরসভার আর্বজনা পঞ্চায়েত এলাকায় কেন ফেলা হবে। তখন গ্রামবাসীদের শান্ত করতে পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ঠিক হয় এমন কিছু এখানে ফেলা হবে না যাতে বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েন।
কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, সমস্যা তত বাড়ছে। অভিযোগ, ডায়মন্ড হারবারের ২৫-৩০টি নার্সিংহোম এবং জেলা হাসপাতালের আর্বজনা সেখানেই ফেলা হচ্ছে। এমনকী, নার্সিংহোমের মৃত শিশুর দেহও এই ভ্যাটে ফেলা হয় বলে অভিযোগ।
ডায়মন্ড হারবারের উপ পুরপ্রধান পান্নালাল হালদার বলেন, ‘‘আমরা ওই ভ্যাটটি নির্দিষ্ট এলাকার ময়লা ফেলার জন্য করেছি। এখন কে বা কারা রাতে ওখানে জঞ্জাল ফেলছে তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’ ডায়মন্ড হারবারে পাইকারি মাছের বাজারের সমস্ত পচাগলা মাছ, মরা কাঁকড়া ফেলা হয় ওই ভ্যাটেই। বছরের পর বছর এখানে জঞ্জাল ফেলার ফলে বড় স্তূপ তৈরি হয়েছে। সে জন্য এখন ভিতরে আর নোংরা ফেলছে হচ্ছে না। ভ্যাটের সামনে গেটের কাছেই আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। গেটের সামনে যে সমস্ত নোংরা ফেলা হয়েছে, তা মেশিন দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে বলে উপ পুরপ্রধান পান্নালালবাবু জানান। ওই জঞ্জাল থেকে সার বা জ্বালানির গুল তৈরির জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে পুরসভা থেকে জানা গিয়েছে। পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভ্যাটটি তৈরির সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, পুরসভার আবর্জনা ছাড়া জেলা হাসপাতালের বেওয়ারিশ লাশ ওই ভ্যাটে পুঁতে দেওয়া হবে। এলাকায় যাতে কোনও ভাবে দুর্গন্ধ না ছড়ায়, সে জন্য নিয়মিত ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হবে। এই সব শর্তে পূর্ত দফতরের সাহায্যে পরিবেশবিদদের মতামত নিয়েই ভ্যাটটি চালু করা হয়েছিল।
ওই ভ্যাটের কাছাকাছি রয়েছে গৌরীপুর, হাঁসডোগরা ও দলনঘাটা গ্রাম। তা ছাড়াও, ভ্যাটটি জাতীয় সড়কের পাশে হওয়ায় প্রচুর গাড়ি সেখান দিয়ে যাতায়াত করে। দুর্গন্ধে প্রত্যেকেই নাজেহাল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে বর্ষার সময়ে দুর্গন্ধ ছড়াত। এখন সারা বছরই তাঁদের ভুগতে হয়। প্রবীণ বাসিন্দা শঙ্কর দলুই বলেন, ‘‘এলাকার এই অবস্থার জন্য আত্মীয়-স্বজন আসতে চান না। এ যা অবস্থা হয়েছে, বাড়ির ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে।’’ দুর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে এলাকায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।