আলোর একটি খুঁটিও লাগানো হয়নি সেতুতে। নিজস্ব চিত্র।
দীপাবলিতে যখন চারিদিক সেজে উঠছে আলোর রোশনাইয়ে, তখন রাত ঘনালে অন্ধকারে ঢেকে যাওয়াই ভবিতব্য মৃদঙ্গভাঙা নদীর উপরে সেতুটির।
রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের বোলের বাজার ও পাথরপ্রতিমা ব্লকের পূর্ব দ্বারিকাপুর সংযোগকারী ওই সেতু অবশ্য সারা বছরই সূর্য ডোবার পরে আঁধারে ডুবে থাকে। দীপাবলির আগেও সেই দশা কাটেনি।
সেতুটি প্রায় দু’কিলোমিটার লম্বা। সন্ধ্যার পরে সেখান দিয়ে পারাপার করতে ভয় পান মানুষজন। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা সেই সেতুতে দুষ্কৃতীদের আড্ডা জমে, অভিযোগ এমনটাই। চুরি-ছিনতাই লেগেই আছে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয় না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে বলেও জানালেন তাঁরা। এ বিষয়ে সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‘ওই সেতুতে আলো নেই, এ বিষয়টি জানা ছিল না। দফতরে এ নিয়ে কথা বলব।’’
প্রায় দেড় কিলোমিটার চওড়া মৃদঙ্গভাঙা নদীতে এক সময়ে যন্ত্রচালিত নৌকো পারাপার করত। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই তা বন্ধ হয়ে যেত। শুধু তাই নয়, রাতেও নৌকো চলত না। এতে সমস্যায় পড়তেন মানুষ। মথুরাপুর ২ বিডিও মোনালিসা তিরকে বলেন, ‘‘ওই সেতুটি দুই ব্লকের সংযোগকারী। সে কারণে দুই ব্লকের মধ্যে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’’
২০০৮ সালে বাম জমানায় সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ থেকে সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালে সেতুর কাজ শেষ হয়। উদ্বোধনের পরে সেতু নীল-সাদা রঙে সেজে ওঠে। শুরু হয় পারাপার।
পাথরপ্রতিমা ব্লকের দ্বারিকাপুর, কেদারপুর, কুমারপুর, কামদেবপুর, হেড়ম্বগোপালপুর-সহ ২০-২৫টি গ্রামের বাসিন্দারা তাতে উপকৃত হন। আবার রায়দিঘি মথুরাপুর ব্লকের নন্দকুমারপুর পঞ্চায়েতের মহম্মদনগর, কৈলাসপুর-সহ বেশ কিছু গ্রামের বাসিন্দারাও সেতু ব্যবহার করেন। ওই এলাকার বাসিন্দারা নিত্য প্রয়োজনে রায়দিঘি বাজারে আসেন। তা ছাড়া, রায়দিঘিতে রয়েছে গ্রামীণ হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, নানা সরকারি প্রতিষ্ঠান। ডায়মন্ড হারবারে আসতে হলেও ওই সেতু পেরিয়েই আসতে হয়। কলকাতা যাওয়ার জন্য স্টেশনে যেতে হলেও এই সেতু পেরিয়ে আসতে হয়।
কিন্তু সেতুতে কোনও আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পরে লুঠপাটের ভয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বাড়ে। সেতুর উপরে বসে মদের আসর। মহিলারা আঁধার পথে সেতু পেরোতে রীতিমতো আতঙ্কে থাকেন।
রায়দিঘির বোলের বাজার এলাকার বাসিন্দা অমিত মাঝি, ভোলা পাঁজাদের অভিযোগ, ‘‘বোলের বাজারে সোম-শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত হাট বসে। ও পার থেকে বহু মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন। সন্ধ্যার সময়ে বাড়ি ফিরতে তাঁদের অসুবিধা হয়। সব্জি বিক্রেতারাও রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে সমস্যায় পড়েন।’’ পাথরপ্রতিমার বাসিন্দা সুজিত খাটুয়ার রায়দিঘিতে ব্যবসা আছে। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ি ফিরতে মাঝে মধ্যে রাত হয়। তখন খুব সমস্যা হয়। কারণ কোনও গাড়ি চলে না। টাকা-পয়সা নিয়ে ওই অন্ধকার সেতু দিয়ে ফিরতে বেশ ভয় ভয় লাগে।’’ বোলের বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক অশোক জানার কথায়, ‘‘সেতুর উপরে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। এ পারের মানুষ কেনাকাটা করতে এলে বাড়ি ফিরতে সমস্যায় পড়ছেন।’’