দরকার ৩০ হাজার, মিলল মাত্র ৬০০

ছেলের অন্নপ্রাশন। তাই ক্যানিঙের ডাকঘরে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা তোলার জন্য লাইন দিয়েছিলেন অন্নপূর্ণা মণ্ডল। অনেক ভিড় ঠেলে কাউন্টারে পৌঁছানোর পরে জানতে পারলেন, ২ হাজার টাকার বেশি দেওয়া হবে না। বাধ্য হয়ে সেই টাকা নিয়েই ফিরে গেলেন তিনি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

ডাকঘরে টাকা মিলবে কখনও? বাঁ দিকে বনগাঁয় নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি। ডান দিকে, একই অবস্থা ক্যানিঙে। ছবি: সামসুল হুদা।

ছেলের অন্নপ্রাশন। তাই ক্যানিঙের ডাকঘরে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা তোলার জন্য লাইন দিয়েছিলেন অন্নপূর্ণা মণ্ডল। অনেক ভিড় ঠেলে কাউন্টারে পৌঁছানোর পরে জানতে পারলেন, ২ হাজার টাকার বেশি দেওয়া হবে না। বাধ্য হয়ে সেই টাকা নিয়েই ফিরে গেলেন তিনি।

Advertisement

ঘটনা ২: অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বনগাঁ মুখ্য ডাকঘরে এসেছিলেন গোপালনগরের হানিডাঙা এলাকার বাসিন্দা মালতি রায়। স্বামীর চিকিৎসার জন্য প্রায় ৩০ হাজার দরকার। কিন্তু শেষমেশ পেলেন মাত্র ৬০০ টাকা।

দু’টি ঘটনাই বলে দিচ্ছে শনিবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডাকঘরগুলির অবস্থা কী রকম ছিল! জেলার মুখ্য ডাকঘরগুলিতে লাইন দিয়ে তবু হাজার খানেক টাকা মিলেছে। কিন্তু গ্রামের দিকের বেশিরভাগ উপ ডাকঘরে তো টাকাই আসেনি। ফলে, এক দিকে বেশিরভাগ এটিএম বন্ধ, অন্য দিকে ডাকঘরে টাকা নেই— নোট বাতিলের চোটে শনিবারও বজায় থাকল দুর্ভোগ।

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকারের আশ্বাস ছিল, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে পরিস্থিতি। কিন্তু দুই ২৪ পরগনার শহর থেকে গ্রামে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিকের তুলনায় আরও জটিল হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা না পেয়ে কয়েকটি ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে।

ক্যানিং মহকুমার ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, ভাঙড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকঘরে শুক্রবার পর্যন্ত টাকা তোলা যাচ্ছিল না। শনিবার কিছু ডাকঘরে টাকা ঢোকে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সেটি ছিল অনেক কম। ক্যানিং ডাকঘরে ৪০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা দেওয়া গেলেও ২০০০ টাকার বেশি তোলা যায়নি। গোসাবা এবং বাসন্তীর ডাকঘরে আবার ৫০০ টাকা করে জমা এবং তোলা গিয়েছে। ডায়মন্ড হারবারের মূখ্য ডাকঘরে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট নেওয়া হলেও ওই ডাকঘরের অধীনে থাকা ১০০টি উপ ডাকঘরে ওই নোট নেওয়া হচ্ছে না। ফলে সমস্যায় পড়েছেন উপ ডাকঘরগুলির গ্রাহকেরা। কাকদ্বীপ উপ ডাকঘরে শুক্রবার ১০ লক্ষ টাকার মতো নতুন নোট দেওয়া দিয়েছিল। সেটি শুক্রবার বিকেলের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। শনিবারও সেখানে প্রায় একই অবস্থা ছিল। পোস্টমাস্টার প্রীতিময় মাইতি বলেন, ‘‘আমাদের এখানে গ্রাহক বেশি। তবে আমরা চেষ্টা করেছি সকলকে সাধ্যমতো সাহায্য করতে। পুরনো নোটও জমা নেওয়া হয়েছে।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডাকঘর বিভাগের সুপারিন্টেন্ডেন্ট সেবাব্রত মাঝি বলেন, ‘‘গোসাবা, বাসন্তী, ভাঙড় ডাকঘরে টাকা না ঢোকায় সমস্যা হয়েছে। ক্যানিঙ ডাকঘরে টাকা তোলার ক্ষেত্রে কী সমস্যা হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

বনগাঁ মুখ্য ডাকঘর সূত্রে জানানো হয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত ওই ডাকঘর এবং অধীনে থাকা ৩০টি উপ ডাকঘরের জন্য সব মিলিয়ে মাত্র ১০ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়েছিল। যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। বনগাঁ মুখ্য ডাকঘরের ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার ক্ষিতেন্দ্রনাথ বসু বলেন, ‘‘বহু মানুষকে এ দিন টাকা তুলতে এসে নিরাশ হতে হয়েছে। তবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত আমাদের ডাকঘরে লক্ষাধিক টাকা জমা পড়েছে।’’ নাটাবেড়িয়া শাখা ডাকঘর থেকে গ্রাহকেরা টাকা তুলতে পারেননি। সিন্দ্রাণী উপ ডাকঘরে বেলা আড়াইটে পর্যন্ত টাকা তোলা এবং জমা দেওয়ার কাজ শুরু হয়নি। হেলেঞ্চা উপ ডাকঘর সূত্রে জানানো হয়েছে, মাত্র ৫০ হাজার টাকা এসেছিল। সেটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন ডাকঘরে গ্রাহকদের লাইন লম্বা পড়ে যায়। ব্যারাকপুর মুখ্য ডাকঘরে এ দিন বেলা বাড়তেই ১০০ টাকার নোটে ঘাটতি দেখা যায়। ডাকঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবারের পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। বসিরহাট মহকুমার মুখ্য ডাকঘর এবং উপ ডাকঘরগুলির বেশিরভাগেই টাকা এসেছিল। তবে লিঙ্ক না থাকায় গ্রামীণ এলাকার ডাকঘরগুলিতে টাকা তুলতে সমস্যায় পড়েন গ্রাহকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন