নর্দমায় পড়ে কেরোসিন, আগুন ছুটল সেই বরাবর

ভোরে উঠে উনুনে আঁচ দিচ্ছিলেন পাথরপ্রতিমার বাজারের চা দোকানি মধুসূদন গিরি। উল্টো দিকের বন্ধ রেশন দোকানের মধ্যে থেকে আগুনের হল্কা বেরিয়ে আসতে দেখেই চমকে ওঠেন তি

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০৮
Share:

নেভার-পর: নিজস্ব চিত্র

ভোরে উঠে উনুনে আঁচ দিচ্ছিলেন পাথরপ্রতিমার বাজারের চা দোকানি মধুসূদন গিরি। উল্টো দিকের বন্ধ রেশন দোকানের মধ্যে থেকে আগুনের হল্কা বেরিয়ে আসতে দেখেই চমকে ওঠেন তিনি। চিৎকার-চেঁচামেচি করে লোক জড়ো করেন তিনি। যে কারণে শেষমেশ প্রাণে বেঁচেছেন অনেকে।

Advertisement

তবে আগুনে পুড়ে গিয়েছে কয়েক লক্ষ টাকার সম্পত্তি। কিছু বিদ্যুতের তার জ্বলে গিয়েছে বলে দীর্ঘক্ষণ পুরো বাজার এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। আগুন আয়ত্তে আনতে গিয়ে সামান্য জখম হয়েছেন এক দমকলকর্মী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ আগুন ধরে যায় পাথরপ্রতিমা বাজারের মুরগি পট্টিতে। কেরোসিন ডিলার গৌরহরি দাসের দোকান থেকেই শর্ট সার্কিট হয়েছে বলে সন্দেহ দমকলকর্মীদের। পাশে স্বপন সিটের ইস্ত্রির দোকান, বিক্রমজিৎ দাসের কাঠের আসবাবের দোকানও পুড়েছে।

Advertisement

পাশেই প্রফুল্ল গুছাইতের তিনতলা বাড়ি। দোতলার দু’টি ঘরে আগুন ছড়ালেও অল্পের জন্য বেঁচে যান ওই বাড়ির ভাড়াটে শিক্ষক দম্পতি ও তাঁদের পরিবার। দোকানগুলির অন্য প্রান্তে থাকা মন্টু মাইতির বাড়িতেও আঁচ লেগে দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। ভেঙে গিয়েছে কাচের শার্সি। ওই দু’টি বাড়িতে মালিকেরা ছাড়াও ভাড়াটেরা থাকেন। আংশিক ক্ষতি হয়েছে সত্যেন ভুঁইয়া এবং সচ্চিদানন্দ বেরার দোকানঘরের।

মধুসূদনবাবু বলেন, ‘‘আগুন দেখেই পাশের দু’টি বাড়ির সদস্যদের বলছিলাম, যার যার গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুত নেমে এসো।’’

অনেকেই তা পারেননি। কারণ, ততক্ষণে গৌরহরিবাবুর দোকানের মধ্যে রাখা কেরোসিনের ব্যারেলগুলি এক এক করে বিকট শব্দে ফাটতে শুরু করেছে। তেল ছড়িয়ে পড়ে বাজারের চারদিকের নর্দমায়। তেল ভেসে ভেসে সব দিকে জলের নর্দমা ধরে বইতে থাকে আগুন।

ঘটনাস্থলের পাশেই পঞ্চায়েত সমিতির তরফে নতুন বাজার কমপ্লেক্স তৈরির কাজ চলছে বলে সেখানেই প্রচুর বালি মজুত ছিল। ওই বালিতেই আটকায় নর্দমাবাহিত তেল থেকে চার দিকে বইতে থাকা প্রবল আগুনের শিখা।

গৌরহরির কথায়, ‘‘কালই ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে প্রায় চোদ্দোশো লিটার কেরোসিন তুলেছিলাম। কী ভয়ঙ্কর সর্বনাশ হয়ে গেল।’’

বাজারের ঘিঞ্জি এলাকায় মুহূর্তের মধ্যেই শিখা পৌঁছে যায় দোতলায়। স্বামী স্কুলে যাবেন বলে ভোরবেলা উঠেই সবে রান্না বসিয়েছিলেন শিক্ষিকা তথা একটি বাড়ির ভাড়াটে রূপসী সরেন। তাঁর কথায়, ‘‘চিৎকার শুনে তিন সন্তান এবং স্বামীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি রাস্তায়। ঘরের কিছুই বাঁচাতে পারিনি।’’

খবর শুনেই স্থানীয় সুন্দরবন সংহতি সংসদ ক্লাবের সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে আসেন। জলের বালতি, বালি নিয়ে শুরু হয়ে যায় আগুন আয়ত্তে আনার লড়াই। সকাল পৌনে ৭টা নাগাদ দমকলের কর্মীরা কাকদ্বীপ কেন্দ্র থেকে দু’টি ইঞ্জিন নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। একটি ইঞ্জিন কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলে। ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন দমকলকর্মী পলাশ সামন্ত। তাঁকে পাথরপ্রতিমা ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন