মা অসুস্থ, ফলে সংসারের সমস্ত কাজের দায়িত্ব তার উপরে। সংসারের কাজ সামলে আবার নবম শ্রেণি পড়ুয়া ভাইকেও পড়াতে হয়। সব কিছু সামলে যেটুকু সময় পাওয়া গিয়েছে, সেই সময়টুকুতেই পড়াশোনা করে এ বার মাধ্যমিকে ৬৩৪ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার আরআরআই হাইস্কুলের ছাত্রী কৃষ্ণকলি দালাল।
গোসাবা ব্লকের আরামপুরের দুর্গা দোয়ালি নদীর পাড়ে এক চিলতে জমিতে বাড়ি তাদের। বাবা শ্যামলকুমারবাবু একটি দোকানের কর্মচারী। মাইনে নামেমাত্র। তবু প্রচণ্ড আর্থিক অনটনের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে কৃষ্ণকলি। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে আয়লায় তাদের ঘরদোর ভেসে গিয়েছিল। আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে হয়েছিল পরিবারটিকে। সে সময় পড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল বলে জানায় কৃষ্ণকলি। কিন্তু দমে যায়নি সে। এখন ভাল ফল করে নিজের স্কুলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় সে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তার চোখে। কৃষ্ণকলি বলে, ‘‘আমি ছোট থেকে মায়ের অসুখ দেখে বড় হয়েছি। টাকার অভাবে সে ভাবে মায়ের চিকিৎসা হয় না। আমি চিকিৎসক হয়ে বিনা পয়সায় গরিব মানুষের সেবা করতে চাই। মাকে সুস্থ করতে চাই।’’
কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য নেই এই পরিবারটির। কী ভাবে মেয়ের স্বপ্নপূরণ করবে, তা নিয়ে চিন্তিত মা পুতুল দালালও। টাকার অভাবে মেয়ের জন্য একটি গৃহশিক্ষকও রাখতে পারেননি শ্যামলবাবু। তবে স্কুলের শিক্ষকেরাই পাশে থেকেছেন কৃষ্ণকলির। তা ছাড়া, অনুপ দেবনাথ নামে পাড়ার এক যুবকও মেয়েকে মাঝে মধ্যে পড়া দেখিয়ে দিতেন বলে জানালেন শ্যামলবাবু। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপনকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ওকে বিনা খরচে স্কুলে ভর্তি নেওয়া হবে। আমরা চেষ্টা করব, সব সময়ে ওর পাশে থাকার।’’
অভাবের সঙ্গে লড়াই করে এ বার মাধ্যমিকে ৬৩৬ নম্বর পেয়েছে তালদি মোহনচাঁদ হাইস্কুলের শুভজিৎ দাস। স্কুলে মাধ্যমিকে দ্বিতীয় হয়েছে সে। ক্যানিংয়ের দক্ষিণ তালদির দাস দম্পতির একমাত্র সন্তান শুভজিৎ। বাবা সনাতন দাস একটি দোকান ভাড়া নিয়ে মোবাইল রিচার্জ করেন। সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। দরমার বেড়া দেওয়া একটি ঘরেই ছেলেটির পড়াশোনা।
শুভজিৎ চায় ইঞ্জিনিয়ার হতে। কিন্তু বাবার সামান্য রোজগারে তা যে সম্ভব নয়, বিলক্ষণ জানে। তাই ছেলেটির চোখে মুখে এখন দুশ্চিন্তার ছাপ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় নস্কর বলেন, ‘‘ওর অভাবের কথা পরে জেনেছি। ছেলেটি আমাদের গর্ব। ও আমাদের স্কুলেই ভর্তি হবে।’’ অভাবের কারণে মাধ্যমিকে কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না তার। এলাকার এক দাদা মিঠুন হালদার তাকে একটু আধটু পড়িয়েছেন। শুভজিতের মা নীলিমা দাস বলেন, ‘‘ছোট থেকে ছেলের কোনও চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন ওর স্বপ্ন কী ভাবে পূরণ করব, জানি না।’’