এই ছাত্রী নিবাসটিই চালু করার দাবি উঠেছে। —নিজস্ব চিত্র।
সড়ক, নদীপথ মিলিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উজিয়ে কুলতলির রাধাবল্লভপুর গ্রামের চম্পা বৈরাগী কলেজে আসেন। কলেজে যাতায়াতেই বিএ দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ওই তরুণীর বেশ কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়।
শুধু চম্পা নন। তাঁর মতো অনেক মেয়েকেই দূরদূরান্ত থেকে পড়তে আসতে হয় রায়দিঘির সুন্দরবন মহাবিদ্যালয়ে। কলেজে আসতে-যেতে রীতিমতো দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাঁদের। মেয়েদের যাতায়াতের কষ্ট লাঘব করতে কয়েক বছর আগে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের তরফে চারতলা একটি ছাত্রীনিবাস নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটি চালু করা যায়নি। অবিলম্বে আবাসটি চালু করার দাবি তুলেছেন ছাত্রীরা।
সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা আশ্বাস দিয়েছেন, আবাসটি দ্রুত চালু করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
১৯৯৫ সালে কলেজটি তৈরি হয়। সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানা, মন্দিরবাজার, কুলপি, পাথরপ্রতিমা, মৈপীঠ কোস্টালের মতো প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অনেক মেয়ে এখানে পড়তে আসেন। এমনকী, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মেয়েরাও এখানে পড়েন। ফলে এত দূর থেকে প্রতিদিন কলেজে যাতায়াত করা তাঁদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যায় দুর্ভোগ বাড়ে। দূর থেকে থেকে আসা ছাত্রীদের সুবিধার জন্য ২০১০ সালে তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কলেজের পাশেই প্রায় ১৫ বিঘা জমির উপরে ছাত্রীনিবাস নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দু’বছরের মধ্যে তা চালু করার কথা ছিল। কিন্তু এত দিনেও তা হয়নি। আবাসটি চালু না হওয়ায় অনেক মেয়েই আশপাশের এলাকায় মেস ভাড়া করে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। ওই খরচ বহন করতে দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা সমস্যায় পড়ছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্রী নিবাসের জন্য রাজ্য সরকার প্রায় ১ কোটি টাকা দেয়। সেই টাকায় চারতলা ওই ভবনে শৌচাগার-সহ প্রায় ৭০ ঘর তৈরি হয়। প্রায় ২০০ জন ছাত্রী সেখানে থাকতে পারেন। ছাত্রী আবাসনের দেওয়ালের গায়ে নীল-সাদা রঙ হয়েছে অনেক আগেই। তবে ভিতরের কিছু কাজ বাকি। ছাত্রীদের বক্তব্য, ওই এলাকায় প্রায় পনেরোটি মেস আছে। এক-একটি মেসে ৫-১০ জন করে ছাত্রী থাকেন। মেসে থাকতে গিয়ে একদিকে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয়। আবার ছাত্রীসংখ্যা বাড়তে থাকায় ভাল মেস সব সময়ে মেলেও না।
কান্তিবাবু বলেন, ‘‘আমাদের সময়ে আবাসটি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। অনেক আগেই তা চালু করার পরিকল্পনা ছিল। কেন ওরা এখনও তা করল না, জানি না।’’ কান্তিবাবুর বক্তব্য, ‘‘সরকারি আবাস হিসেবে ঘোষণা হলে মেয়েরা আর্থিক ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে।’’
মথুরাপুর-২ ব্লক টিএমসিপি সভাপতি উদয়ন হালদার বলেন, ‘‘ওই কলেজে প্রায় চারশো ছাত্রী প্রত্যন্ত ও দ্বীপ এলাকা থেকে আসেন। তাঁদের কথা ভেবে ছাত্রী আবাসটি দ্রুত চালু করার জন্য স্থানীয় বিধায়ক দেবশ্রী রায়, সাংসদ চৌধুরীমোহন জাটুয়া এবং সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদকে আবেদন জানিয়েছি। নতুন মরসুমের আগেই যাতে তা চালু হয়, সেই অনুরোধ করা হয়েছে।’’
কলেজের অধ্যক্ষ সুদিন সিংহ বলেন, ‘‘সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর আবাসটি করছে। ওরা না হস্তান্তর করলে আমাদের কিছু করার নেই। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী-সহ বিভাগীয় দফতরে একাধিক বার বিষয়টি জানিয়েছি।’’ মন্টুরামবাবু বলেন, ‘‘ছাত্রী আবাসটির বিষয়ে দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। অল্প কিছু কাজ বাকি আছে। সেটুকু দ্রুত শেষ করে ওই আবাস কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’ মন্ত্রীর আশ্বাস দ্রুত বাস্তবায়িত হোক, এমনটাই চাইছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা।