বসিরহাটে শুরু হয়ে গিয়েছে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র।
মহিলাদের জন্য মহিলা পরিচালিত গ্রন্থাগার চালু হতে চলেছে সুন্দরবনে। উদ্যোক্তা, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ। পাঠ্যবই এবং অন্যান্য বইপত্র ছাড়াও গ্রন্থাগারগুলিতে থাকবে সংবাদপত্র, কম্পিউটার, অডিও ভিস্যুয়াল শিক্ষার উপকরণ।
পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মহিলাদের সুবিধার কথা ভেবে এবং সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই এই সিদ্ধান্ত। গ্রন্থাগার পরিচালনাও করবেন মহিলারা।’’ বসিরহাট মহকুমার ৯টি থানাতেই এই গ্রন্থাগার হবে বলে তিনি জানান। প্রকল্পের নাম, ‘লৌহ মানবী।’
থানার আশপাশে দানের ভবনেই চালু হচ্ছে গ্রন্থাগারগুলি। বইপত্র বা অন্য সরঞ্জাম কেনার খরচ দিচ্ছে জেলা পুলিশই। তবে স্থানীয় দানও গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। গ্রন্থাগারের সদস্য পদ পেতে কোনও খরচও দিতে হবে না মহিলাদের।
গ্রন্থাগারে নিয়মিত যাতায়াত করলে পুলিশের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ থাকবে মহিলাদের। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলারাও তাঁদের সমস্যার কথা অনায়াসে পুলিশকে সরাসরি জানাতে পারবেন বলে মনে করছেন পুলিশ কর্তারা।
ইতিমধ্যেই সুন্দরবন-লাগোয়া হেমনগর, সন্দেশখালি এবং বসিরহাট থানা এলাকায় গ্রন্থাগার তৈরির কাজ শেষ। পরীক্ষামূলক ভাবে কাজও শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। ইতিমধ্যেই সদস্যপদ সংগ্রহ শুরু হয়েছে। তাতে উৎসাহিত পুলিশ কর্তারাও। খুব শীঘ্রই হাসনাবাদ, বাদুড়িয়া, হাড়োয়া, হিঙ্গলগঞ্জ এবং মিনাখাঁ থানা-সংলগ্ন এলাকাতেও গ্রন্থাগারের কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জনসংযোগ বৃদ্ধিও গ্রন্থাগার চালুর একটি উদ্দেশ্য। পাশাপাশি গ্রামের মহিলারা যাতে পড়াশোনা করে সাবলম্বী হতে পারেন, সে জন্য থানা থেকে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। গ্রন্থাগারের প্রচার ও প্রসারের দিকে লক্ষ রেখে ইতিমধ্যেই ফেসবুক, হোয়াটঅ্যাপ খোলা হয়েছে। ই-মেল অ্যাকাউন্টও করা হয়েছে।
সুন্দরবন-লাগোয়া হেমনগরে গ্রন্থাগার হওয়ায় খুশি স্থানীয় প্রমিলা মণ্ডল, কাকলি দাস, খুকুমনি সর্দাররা। তাঁদের কথায়, ‘‘নানা বিপদে পড়লেও এত দিন পুলিশের ভয়ে থানায় যেতে সাহস করিনি। এখন পুলিশের তৈরি গ্রন্থাগারে বই পড়তে পারব, ভিডিওর মাধ্যমে দেশ-বিদেশের খবর জানতে পারব। যার সূত্রে পরিবারের বিপদ-আপদ পুলিশকে জানাতে পারব ভেবে ভাল লাগছে।’’ গ্রন্থাগারে কম্পিউটার, ইন্টারনেট থাকায় মহিলারা বাড়তি সুবিধা পাবেন বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই।
পুলিশের এক অফিসার জানান, অনেক সময়ে দেখা যায়, শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতিতা হচ্ছেন মহিলা। অথচ পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের অভাবে সে কথা কাউকে বলতে পর্যন্ত পারছেন না। কেউ কেউ হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নিচ্ছেন। গ্রন্থাগারে এসে এক সঙ্গে অনেক মহিলা মিলে পড়াশোনা করলে তাঁরা নিজেদের মনের কথা অন্যকে খুলে বলতে পারবেন। তাতে আত্বিশ্বাস বাড়বে। মহিলাদের পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারগুলি একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠতে পারে। নারী ও শিশু পাচার বন্ধের ক্ষেত্রেও মহিলাদের এই ভাবে সঙ্ঘবদ্ধ হওয়া কাজে আসতে পারে বলে ওই পুলিশ কর্তার আশা।
‘লৌহ মানবী’ প্রকল্পে স্বাস্থ্য শিবির, হেল্থ কার্ডের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ব্যবস্থা, পিঠে-পুলি তৈরির প্রশিক্ষণ— এ ধরনের আরও নানা কাজে যুক্ত হতে পারেন মহিলারা। সে ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনেরও সহায়তা মিলবে।