Poor production of Litchi

কমেছে ফলন, লিচুর দেখা নেই বাজারে

চাষিরা জানান, এপ্রিলের গোড়ার তীব্র তাপপ্রবাহই কার্যত শেষ করে দিয়েছে লিচুর ফলন। তা ছাড়া কম শীত এবং শীতকালীন বৃষ্টির অভাবও ফলনে প্রভাব ফেলেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৩ ১০:৩৩
Share:

ফলনের সময় লিচুর দেখা নেই গাছে। বারুইপুরে। নিজস্ব চিত্র।

চাঁদিফাটা গরমে আম এসেছে। কিন্তু বাজারে লিচু কই!

Advertisement

এ বার অন্যান্য ফল মিললেও সে ভাবে লিচুর দেখা নেই। চাষিরা জানাচ্ছেন, এ বার লিচুর ফলন একেবারেই ভাল হয়নি। সেই কারণেই বাজারে দেখা মিলছে না। যেটুকু আসছে, তাও বিকোচ্ছে অগ্নিমূল্যে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের লিচু বিখ্যাত। এই মহকুমা শহর-সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকায় লিচুর চাষ হয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি, রাজ্যের বাইরে যায়, রফতানি হয়ও এখানকার লিচু। প্রতি বছরই এপ্রিল-মে মাসে বাজার ছেয়ে থাকে এই ফল। মুর্শিদাবাদ জেলায় ফরাক্কা, শমসেরগঞ্জ ও সুতিতেও লিচুর চাষ হয়। সেখানেও এ বার ফলন ভাল নয়।

Advertisement

চাষিরা জানান, এপ্রিলের গোড়ার তীব্র তাপপ্রবাহই কার্যত শেষ করে দিয়েছে লিচুর ফলন। তা ছাড়া কম শীত এবং শীতকালীন বৃষ্টির অভাবও ফলনে প্রভাব ফেলেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

কৃষিবিজ্ঞানী তথা নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রম কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান চন্দনকুমার মণ্ডল বলেন, “লিচুর মুকুল আসার জন্য ঠিক মতো শীত পড়া দরকার। সেই সঙ্গে শীতটা একটু লম্বা হওয়াও দরকার। এ বার সেটা হয়নি। অন্য বার শীতে সামান্য হলেও বৃষ্টি হয়। নভেম্বরের পর থেকে এ বার প্রায় বৃষ্টিই হয়নি। ফলে, মাটি শক্ত থাকায় ফলের বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়েছে। এপ্রিলে তীব্র তাপপ্রবাহের বহু লিচু ঝলসে গাছেই ফেটে যায়। এ সবের জেরেই ফলন খারাপ হয়েছে।”

বারুইপুরের কল্যাণপুর, শিখরবালি ১-সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় দু’ধরনের লিচু চাষ হয়। দেশি এবং বোম্বাই প্রজাতির। গ্রীষ্মের শুরুতেই দেশি লিচুর ফলন শুরু হয়। এর কিছু দিন পর থেকে ফলতে শুরু হয় বোম্বাই লিচু। এ বার দেশি লিচু কিছু মিললেও বোম্বাই লিচুর ফলন কার্যত নেই বলেই দাবি চাষিদের।

শিখরবালি ১ পঞ্চায়েতের ত্রিপুরানগর গ্রামের চাষি অলোক নস্করের তিন বিঘা জমিতে ৩৯টি লিচু গাছ রয়েছে। অলোক জানাচ্ছেন, গত বছরও লাখখানেক টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। সেখানে এ বার হাজার পাঁচেক টাকারও বিক্রি হয়নি। ফলে, চাষে ব্যবহৃত সার-রাসায়নিকের খরচও ওঠেনি। তাঁর কথায়, “চৈত্রের শেষ দিকে যে তাপপ্রবাহটা হল, তাতেই লিচু চাষ শেষ হয়ে গিয়েছে। দেশি লিচু সেই সময় কিছু গাছে ছিল। বেশিরভাগই ঝলসে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বোম্বাই লিচুটা ওই সময় তৈরি হয়। তীব্র তাপপ্রবাহে বেশিরভাগ গাছের মুকুল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে, বোম্বাই লিচু এ বার প্রায় ফলেইনি। এ রকম আগে দেখিনি।”

বারুইপুরের কাছারি বাজারের ফল বিক্রেতা শাহারুল লস্কর জানান, বারুইপুরের লিচু মিলছে না। বাইরে থেকে কিছু লিচু আসছে। তবে, অন্য বারের তুলনায় কম। দামও বেড়েছে। আরও কয়েকজন বিক্রেতা জানান, অন্য বার বারুইপুরের দেশি বা বোম্বাই লিচু এক আঁটি (৫০টা) ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হত। বাইরের লিচু মিলত ৮০-১০০ টাকায়। জোগান কম থাকায় সেই দাম এখন ১৫০-১৮০ টাকা।

সুতির ছাবঘাটির প্রবীণ লিচু চাষি সাহাদাদ হোসেন বলেন, “লিচু এক বছর ভাল ফলন হলে, পরের বছর ভাল ফলন হয় না। তবে এ বারে খুবই খারাপ ফলন। অনান্য বছর এতটা কম হয় না। আবাহওয়ার জন্যই ফলন কম হয়েছে।”

অন্য চাষের ক্ষেত্রে বিমা থাকলেও আম-লিচুতে নেই। ফলে, ক্ষতিপূরণ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন