সপ্তদীপের সাহসিকতায় ধরা পড়ল চোর

আড়চোখে দেখে চুপি চুপি সেখান থেকে উঠে যায় ন’বছরের সপ্তদীপ। খবর দেয় দিদিমাকে। শেষমেশ লোক জড়ো হয়ে যায়। চোর ধরতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন স্থানীয় এক শ্রমিক। প্রাথমিক ভাবে পালাতে পারলেও পরে পুলিশ গ্রেফতার করেছে কেতাব আলি মণ্ডল নামে ওই চোরকে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩৯
Share:

খুঁটিয়ে: সিসি টিভির সামনে সপ্তদীপ-সহ বাড়ির লোকজন। ইনসেটে সপ্তদীপ সাধুখাঁ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

কাচের দরজার পিছনে কাকে যেন দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

আড়চোখে দেখে চুপি চুপি সেখান থেকে উঠে যায় ন’বছরের সপ্তদীপ। খবর দেয় দিদিমাকে। শেষমেশ লোক জড়ো হয়ে যায়। চোর ধরতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন স্থানীয় এক শ্রমিক। প্রাথমিক ভাবে পালাতে পারলেও পরে পুলিশ গ্রেফতার করেছে কেতাব আলি মণ্ডল নামে ওই চোরকে।

এ দিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় বনগাঁর চড়কতলা এলাকার এই ঘটনায় ছোট্ট সপ্তদীপের উপস্থিত বুদ্ধির তারিফ করছেন সকলেই। প্রতিবেশীরা বলছেন, ‘‘ওটুকু ছেলের বুদ্ধির জন্য চুরিটা ঠেকানো গেল।’’

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চড়কতলার বাসিন্দা রাজকুমার রায়ের বাড়িতে কয়েক দিন ধরে শ্রমিকেরা কাঠ-পাথরের কাজ করছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় দোতলার ঘরে সোফায় বসে রাজকুমারের নাতি সপ্তদীপ সাধুখাঁ মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিল। হঠাৎ তার নজরে পড়ে, ডান দিকের কাচের দরজার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

সোফা থেকে উঠে সপ্তদীপ পাশের ঘরে দিদিমা মিঠুকে সে কথা জানায়। ওই সুযোগে চোর কাচের দরজা ঠেলে উঠে গিয়েছে উপরে। দিদিমা প্রশ্ন করলেও সপ্তদীপ নিশ্চিত, কাউকে সে দেখেছে। বাড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরার মনিটর দেখতে ছোটে ছেলে। সেখানে দেখা যায়, এক যুবক তিনতলায় উঠে গেল। বাড়িতে তখনও কাজ করছিলেন অসীম বিশ্বাস নামে এক শ্রমিক। তাকে ডেকে নিয়ে তিনতলায় ওঠে সপ্তদীপ।

সেখানে কাউকে দেখা যায়নি। খুঁজতে খুঁজতে সপ্তদীপেরই নজরে পড়ে, ওয়াশিং মেশিনের পিছনে কেউ লুকিয়ে আছে। সপ্তদীপ চিৎকার করে ওঠে। অসীম ওই যুবককে ধরতে যেতেই সে ধারাল অস্ত্র নিয়ে তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাড়িতে আরও দু’জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। তাঁরাও সপ্তদীপের চিৎকার শুনে চলে আসেন। চোর পালায়। অসীমকে ভর্তি করা হয়েছে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। তাঁর সাহসের প্রশংসাও শোনা যাচ্ছে সকলের মুখে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজকুমারের বাড়িতেই দিন কয়েক আগে পাথর বসানোর কাজ করছিল ওই যুবক। বৃহস্পতিবার ঠাকুরঘরে থাকা লক্ষ্মী প্রতিমার সোনার নথ চুরি হয়। সিসি ক্যামেরা থেকে পরিবারের লোকজন দেখে পান, ওই যুবকই সেটি সরিয়েছে। বকাঝকা করলে সে গয়না ফেরতও দিয়েছিল। তাকে কাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিবারের লোকজনের অনুমান, বদলা নিতেই ফের সে চুরি করতে ঢুকেছিল।

একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে সপ্তদীপ। তাকে দেখতে এখন পাড়া-পড়শির ভিড় বাড়িতে। সকলকে সিসি ক্যামেরায় চোরের ছবি দেখাতে ব্যস্ত সে। সপ্তদীপের কথায়, ‘‘প্রথমটায় ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু মনে হল, ভয় পেলে চলবে না। তাই সকলকে ডাকাডাকি করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন