কয়েক দিনের স্নায়ুযুদ্ধ শেষ।
রাজ্য জুড়ে জোট ঐক্যকে আরও মসৃণ করতে চেয়ে শেষ পর্যন্ত বাগদা আসনটি কংগ্রেসকে ছেড়ে বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রে সরে গেল ফরওয়ার্ড ব্লক। স্বাভাবিক ভাবেই স্বস্তিতে বাগদা বিধানসভা এলাকার শাসক বিরোধী কংগ্রেস-সিপিএম-ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী-সমর্থকেরা।
বাগদায় তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক দুলাল বরকে জোটের প্রার্থী করতে চেয়ে কয়েক দিন ধরেই সিপিএম, কংগ্রেস ও স্থানীয় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব দিনরাত এক করে ফেলেন। বিশেষ করে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ ঘোষ, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী, জেলা কংগ্রেসের (গ্রামীণ) নির্বাচনী পর্যবেক্ষক কৃষ্ণপদ চন্দ ও বাগদা ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আমজাদ হোসেন সর্দার। কংগ্রেস, সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লকের স্থানীয় নেতৃত্বের একটা বড় অংশের অনড় মনোভাবের ফলেই শেষ পর্যন্ত ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য নেতৃত্ব বাগদা থেকে তাদের পূর্ব ঘোষিত প্রার্থী সরিয়ে নিয়েছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সম্প্রতি নিজেদের অনুগামীদের নিয়ে কংগ্রেসে যোগ দেন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত নেতা দুলালবাবু। তিনি জানিয়েছিলেন, বিধানসভা ভোটে বাগদা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটেই দাঁড়াতে চান। তাতে আপত্তি ছিল না কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্বের। এমনকী, তাতে আপত্তি করেননি স্থানীয় ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশও। কিন্তু বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রথমে বাগদা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসাবে গতবারের পরাজিত প্রার্থী মৃণাল সিকদারের নাম ঘোষণা করে দেওয়া হয়। যা মেনে নিতে পারেননি কংগ্রেস, সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লকের স্থানীয় নেতৃত্বের বড় অংশ। স্বাভাবিক ভাবেই কর্মীর অভাবে মৃণালবাবু কার্যত প্রচার শুরুই করতে পারেননি। মৃত্যুঞ্জয়বাবু জেলা কমিটির কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তা প্রত্যাহার করেন। কিন্তু দলের মধ্যে চাপ তৈরি হয়েছিল যথেষ্ট।
এরই মধ্যে বুধবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দুলালবাবুকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সকলেই ভেবেছিলেন, এ বার বুঝি ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করবেন। কিন্তু উল্টে ফরওয়ার্ড প্রার্থী হিসাবে বাগদায় মৃণালবাবুর পরিবর্তে অশোক বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। গোটা ঘটনায় বাগদার শাসক বিরোধী মানুষ হতাশ হয়ে পড়েন।
কিন্তু হাল ছাড়েননি পঙ্কজবাবু, মৃত্যুঞ্জয়বাবু, কৃষ্ণপদবাবুরা। নিজেদের দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সঙ্গে বার বার আলোচনা করে বাস্তব পরিস্থিতিটা বোঝানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যেও বেশ কয়েকবার বৈঠক করে পরিকল্পনা স্থির করেন।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য সমস্ত জল্পনার অবসান হয়েছে। শুক্রবার বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বাগদা থেকে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিবর্তে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী সুশান্ত বাওয়ালি বনগাঁ উত্তর কেন্দ্র থেকে লড়াই করবেন। সুশান্তবাবু স্থানীয় ব্যাসপুর হাইস্কুলের শিক্ষক। এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল জহর বিশ্বাসকে। কংগ্রেস ওই প্রার্থী তুলে নিয়েছে।
ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা বা রাজ্য নেতৃত্ব প্রাথমিক ভাবে বাগদা কেন্দ্রটি ছাড়তে চাইছিলেন না কেন?
দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বাম শরিকদের মধ্যে বাগদা আসনটিতে দীর্ঘদিন ধরেই ফরওয়ার্ড প্রার্থীরা লড়াই করছেন। তাদের বিধায়কও ছিলেন অতীতে। বনগাঁ মহকুমার মধ্যে বাগদাতেই ফরওয়ার্ড ব্লকের সংগঠন সব থেকে বেশি শক্তিশালী। ফলে কংগ্রেসকে আসনটি ছেড়ে দিলে ওই এলাকায় তাদের সংগঠন দুর্বল হতে পারে, আশঙ্কা ছিল নেতৃত্বের।
কিন্তু তৃণমূলকে হারানোই সেখানে সকলের লক্ষ্য, সেখানে ওই আপত্তি আর তাঁরা পুষে রাখেননি। সকলেই মনে করেছেন, তৃণমূল প্রার্থী উপেন বিশ্বাসকে কড়া টক্কর দিতে গেলে দুলালবাবুই সঠিক পছন্দ।
বাগদার জট না ছাড়ায় এত দিন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রেও জোটের প্রার্থী ঘোষণা হচ্ছিল না। জটিলতা কাটার পরে পঙ্কজবাবু বলেন, ‘‘দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরে এখানে জোট আরও শক্তিশালী হল।’’ কৃষ্ণপদবাবুর কথায়, ‘‘জোটের স্বার্থে সকলেই ঐকমত্যে পৌঁছতে পেরেছি।’’ মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘সার্বিক ভাবে জোট লাভবান হল।’’
আর যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই দুলালবাবুও হাঁফ ছেড়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েকটা দিন ধরে দমবন্ধ পরিস্থিতি চলছিল।’’