মেলায় ভক্তদের আপ্যায়নের জন্য তৈরি এলাকার মানুষ

আজ, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বদলে যাবে ঠাকুরনগর শহরটা। ডঙ্কা, কাঁসির আওয়াজে ভরে উঠবে বসন্তের আকাশ-বাতাস। বিশাল এলাকায় বসছে মেলা, মতুয়া ধর্ম মহামেলা। রাজ্যবাসীই শুধু নয়, ভিন রাজ্য এমনকী বাংলাদেশ থেকেও দলে দলে মানুষ ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছেন মেলায়। ঠাকুরনগরও তৈরি ভক্তদের অভ্যর্থনা, আপ্যায়ণে। শুধু ঠাকুরনগরই নয়, তৈরি গাইঘাটা, বনগাঁ, হাবরা-সহ গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। এ বার মেলায় আবেগটাও অনেক বেশি।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সীমান্ত মৈত্র

ঠাকুরনগর শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৬
Share:

চলছে মেলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

আজ, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বদলে যাবে ঠাকুরনগর শহরটা। ডঙ্কা, কাঁসির আওয়াজে ভরে উঠবে বসন্তের আকাশ-বাতাস। বিশাল এলাকায় বসছে মেলা, মতুয়া ধর্ম মহামেলা।

Advertisement

রাজ্যবাসীই শুধু নয়, ভিন রাজ্য এমনকী বাংলাদেশ থেকেও দলে দলে মানুষ ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছেন মেলায়। ঠাকুরনগরও তৈরি ভক্তদের অভ্যর্থনা, আপ্যায়ণে। শুধু ঠাকুরনগরই নয়, তৈরি গাইঘাটা, বনগাঁ, হাবরা-সহ গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। এ বার মেলায় আবেগটাও অনেক বেশি। কিছু দিন আগে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ঠাকুরনগরকে পুরসভা ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আবার ক’দিন আগেই ঠাকুরবাড়ির বড় বৌ তথা সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছেন। ফলে ভক্তদের মধ্যে বাড়তি উত্‌সাহ। এমনিতেই প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মানুষ আসেন মেলায়। এ বার ভিড়টা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ধ্যানেশনারায়ণ গুহ।

ফলে পুলিশ-প্রশাসনও বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে। বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে মেলা পরিচালনা করতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, পুলিশি ব্যবস্থা ও চিকিত্‌সা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।” জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “এসডিপিও বনগাঁ বিশ্বজিত্‌ মাহাতো সব সময়ের জন্য মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন। মেটাল ডিটেক্টরের সাহায্যেও তল্লাশির ব্যবস্থাও থাকছে।” পুলিশের পক্ষ থেকে পথ নির্দেশিকা তৈরি করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাঙানো হয়েছে। ভিড় সামলাতে নির্দিষ্ট রুট ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।

Advertisement

মেলার ক’দিন বন্ধ থাকে ঠাকুরনগরের স্কুলগুলি। পরীক্ষা থাকলে তা অন্যত্র নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ সব অবশ্য সমস্যা নয়, মেলার জন্য এ সব ব্যবস্থা করা থাকে সুষ্ঠু ভাবেই। এলাকার রাস্তা মেরামত করা হয়েছে। শুধু ঠাকুরনগরই নয়, গোবরডাঙা, মছলন্দপুর, হাবরা, বনগাঁর মতো আশপাশের এলাকায় যশোর রোডের মতো রাস্তার পাশে বসেছে জলসত্র। আলোয় সাজানো হয়েছে ঠাকুরবাড়ি। কামনা সাগরের জল ছেঁচে নতুন জল ঢালা হচ্ছে। স্নানের সময়ে দুর্ঘটনা এড়াতে নানা রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ধ্যানেশবাবু বলেন, “এ বার ঠাকুরবাড়ির মন্দির ও কামনা সাগরে ১৬টি সিসি টিভি বসানো হচ্ছে। থাকছে ৬টি পুলিশ ক্যাম্প। এ ছাড়াও থাকবে প্রায় হাজার খানেক নিরাপত্তা কর্মী।”

১৮৬১ সালে অবিভক্ত বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে মতুয়া ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুর এই মেলার সূচনা করেছিলেন। দেশ ভাগের পরে প্রচুর মানুষ ওপার বাংলা থেকে এ দেশে এসে বসবাস শুরু করেন। কবি বিনয় মজুমদার-সহ বহু বিশিষ্ট মানষের বাসভূমি হয়ে ওঠে ঠাকুরনগর। ১৯৪৮ সালে ঠাকুরনগরে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে মেলা শুরু করেন ঠাকুর পরিবারের সদস্য এবং এলাকার রূপকার প্রমথরঞ্জন ঠাকুর। তারপর থেকে মতুয়াদের পীঠস্থান গাইঘাটার ঠাকুরনগরে প্রতিবছরই মেলা বসছে।

রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ছত্রিশগড়, ঝাড়খণ্ড এমনকী পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকেও মতুয়া ভক্তরা মেলায় ভিড় করেন। ভক্তরা ছাড়াও মেলায় ছুটে আসেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষ। মেলার কয়েক দিন আগে থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে ঠাকুরনগরে। এলাকার মানুষের বাড়িতে ভক্তেরা আশ্রয় নেন। ধর্মের টানে মুছে যায় পরিচিত-অপরিচিতের গণ্ডি।

এলাকাবাসী সাধ্যমতো অতিথিদের আপ্যায়ণ করেন। অভ্যাগতদের হাসিমুখে খাওয়া-দাবার জোগান দেন। যাঁরা রান্না করে খাবেন, তাঁদের জন্য থাকে সে ব্যবস্থাও। মেলা কমিটির পক্ষ থেকে ভক্তদের জন্য চাল, ডাল, সব্জি দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা জলসত্র বা ভক্তদের পরিষেবা দিচ্ছেন, তাঁদের জন্যও মেলা কমিটির পক্ষ থেকে চাল, ডালের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

যাঁরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, ঠাকুরনগরের এমন বাসিন্দারাও এই সময় ঘরে ফেরেন। দুর্গাপুজোতেও হয় তো আসতে পারেন না তাঁদের অনেকে। কিন্তু মেলার টানে ঘরে ফিরবেনই। আত্মীয়-স্বজনের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে প্রতিটি বাড়ি। এলাকার ট্রেন-বাস চলে যায় মতুয়া ভক্তদের দখলে। অনেক ভক্ত আবার নিজেরা গাড়ি নিয়ে আসেন। অশোকনগর, বনগাঁর মতো দূরবর্তী এলাকাতেও ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার রুট ম্যাপ লাগিয়ে দেওয়া হয়। মাইকে ঘোষণাও চলে। তবে ঠাকুরবাড়ির বেশ কিছুটা দূরে গাড়ি রেখে তাঁরা ডঙ্কা-কাঁসির তালে নাচ করতে করতে এগিয়ে যান। হাতে থাকে মতুয়াদের লাল-সাদা নিশান।

ঠাকুরনগরে গিয়ে দেখা গেল, চার দিকে উড়ছে মতুয়া-নিশান। বিভিন্ন রাস্তায় তৈরি হয়েছে বিশাল বিশাল তোরণ। মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণিদেবীর (বড়মা) ছবি রয়েছে সেখানে। ঠাকুরবাড়ির সামনের মাঠে দোকানপাট বসতে শুরু করেছে। লোহা, মাটি থেকে শুরু করে বাঁশ, বেতের তৈরি জিনিসপত্রও মিলছে। বসেছে, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, চক্ররেল কত কী!

মেলার প্রস্তুতি দেখভালে চূড়ান্ত ব্যস্ত সদ্য নির্বাচিত সাংসদ মমতা ঠাকুরও। তিনি বলেন, “এ বার ভক্তদের মধ্যে মেলা নিয়ে আবেগ অনেক বেশি। তাই মেলাকে সব রকম ভাবে সুষ্ঠু-সুন্দর করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

(চলবে)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।

ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর ঠাকুরনগর’।

ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp

অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভাগ,

জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন