TMC Councilor

Anupam Dutta Murder: শেষযাত্রায় ভেঙে পড়ল ভিড়, তদন্তের দাবিতে অবরোধ

বাড়িতে নতুন অতিথি আসায় রবিবার দুপুরটা আনন্দেই কাটে সকলের। বিকেলে নিজের ওয়ার্ডে একটি মন্দির সংক্রান্ত বৈঠক সেরে ফিরে এসেছিলেন অনুপম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২২ ০৭:২১
Share:

অনুপমের মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে পথ অবরোধ স্থানীয়দের। সোমবার, বি টি রোডে। নিজস্ব চিত্র

গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টা আগে, রবিবার দুপুরে স্বামীর বলা কথাগুলো এখনও কানে বাজছে স্ত্রী মীনাক্ষী দত্তের। বছর তেরোর মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে অনুপমের কাছে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘কোথায় যাচ্ছ?’’ উত্তরে পানিহাটির আট নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বলেছিলেন, ‘‘সব কথা বলা যায় না। সারপ্রাই‌জ় থাক কিছুটা।’’ এর খানিক পরেই ল্যাব্রাডর প্রজাতির একটি কুকুরছানাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন তিনি।

Advertisement

বাড়িতে নতুন অতিথি আসায় রবিবার দুপুরটা আনন্দেই কাটে সকলের। বিকেলে নিজের ওয়ার্ডে একটি মন্দির সংক্রান্ত বৈঠক সেরে ফিরে এসেছিলেন অনুপম। সন্ধ্যায় বেরিয়ে আগরপাড়া নর্থ স্টেশন রোডে পশু-ওষুধের একটি দোকানে যান তিনি। সেখান থেকে বেরোতেই এক দুষ্কৃতীর গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর। সোমবার দুপুরে বাড়িতে মেয়ে ও বছর ছয়েকের ছেলেকে পাশে নিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন মীনাক্ষী। তাঁর কথায়, ‘‘রাতে একটা নিমন্ত্রণ ছিল। ও বলেছিল, বাড়িতে থাকবে। আমি ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে যাব। কিন্তু কী যে হয়ে গেল! মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রার্থনা, আমাদের পাশে থাকুন। আমার মৃত স্বামী যেন সুবিচার পান।’’

মীনাক্ষী জানাচ্ছেন, বৈঠক সেরে বাড়ি আসেন অনুপম। তার পরে মিঠুন নামে পরিচিত এক যুবক আসেন সেখানে। তাঁর স্কুটারে চেপে ‘একটু আসছি’ বলে বেরিয়ে যান অনুপম। ‘‘কিছু ক্ষণ পরেই পরিচিত এক জন ফোন করে জানাল, ওঁর গুলি লেগেছে। কী করে, কোথায় গুলি লাগল, জানতে পারিনি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছে, অনেক আগে থেকেই ছক কষা হয়েছিল। ভিতরের কেউ না থাকলে এটা হতে পারে না।’’ কাউন্সিলরের খুনে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বিটি রোড অবরোধ করেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের দাবি, ‘‘জড়িতদের নাম পুলিশকে প্রকাশ্যে আনতে হবে।’’ অবরোধে শামিল হন প্রবীণেরাও। সকলে রাস্তায় বসে চিৎকার করে বলেন, ‘‘রাজনীতি বুঝি না। আমরা ধোলু (অনুপমের ডাকনাম)-কে চাই।’’ অবরোধে শামিল বৃদ্ধা লক্ষ্মীদেবী সিংহ বলেন, ‘‘আমার নিজের সন্তান নেই। প্রতি মাসের খরচ দেওয়া থেকে যে কোনও সময়ে ডাকলেই অনুপম হাজির হয়ে যেত। আমি ছেলেহারা হলাম।’’ স্থানীয়েরা জানান, বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে একটি তহবিল তৈরি করে প্রতি মাসে নিঃসঙ্গ ও দরিদ্র বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ভাতা চালু করেছিলেন অনুপম। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে ওঠে অবরোধ।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই আগরপাড়া নর্থ স্টেশন রোডে যেখানে অনুপম খুন হন, সেই জায়গায় ভিড় করেন স্থানীয়েরা। তাঁরা জানান, ওই রাস্তার উপরে যে গুটি কয়েক দোকান রয়েছে, সেগুলির অধিকাংশই বন্ধ থাকে। খুব বেশি আলোও নেই রাস্তায়। এমনকি, রবিবার যে ওষুধের দোকানে সামনে গুলি চলে, তার সামনের বাতিস্তম্ভে আলো জ্বলছিল না।

এ দিন দুপুর থেকে কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনেও ছিল ভিড়। সেখানে অশোক চট্টোপাধ্যায় নামে এক জন জানান, তাঁর কাছ থেকেই কুকুরছানাটি নিয়েছিলেন অনুপম। অশোক বলেন, ‘‘পোষ্যটির একটা সমস্যা হচ্ছিল। অনুপম ফোনে ওষুধের নাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন। ওঁর সঙ্গে কথা বলে আমিও ওষুধের দোকানে যাই। ওষুধ কিনে আমার হাতে প্যাকেটটা দিয়ে বলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া থেকে আমার এক বন্ধু এসেছে। দেখা করে বাড়ি যাচ্ছি। তুমি ওষুধ নিয়ে এগোও।’’ ওই ব্যক্তি জানান, স্ত্রীকে নিয়ে ৫০ মিটার এগোতেই টায়ার ফাটার মতো শব্দ শুনে পিছন ফিরে দেখেন, মাটিতে পড়ে রক্তাক্ত অনুপম। কোনও মতে অটোয় তুলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনার সময়ে সিসি ক্যামেরায় ওই দোকানের সামনে দুই যুবককে দেখা গিয়েছিল। কালো প্যান্ট-কালো গেঞ্জি ও টুপি পরা এক জন পায়চারি করতে করতে ফোনে কথা বলছিলেন। অন্য জন উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কামারহাটির শালপাতা বাগানের বাসিন্দা ওই যুবকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এ দিন আটক করে পুলিশ। যদিও কালো প্যান্ট-কালো গেঞ্জি পরা যুবকের পরিজনদের দাবি, তিনিও পোষ্যের জন্য ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন।

এ দিন ময়না-তদন্তের পরে শববাহী গাড়িতে অনুপমের দেহ তোলার সময়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বন্ধু ও পরিচিতেরা। বিটি রোডের দু’ধারেও দাঁড়িয়ে ছিলেন
অসংখ্য মানুষ। বিকেলে আগরপাড়া স্টেশন রোড হয়ে শববাহী গাড়ি পৌঁছয় অনুপমের পাড়াতে। সেখানেও কয়েক হাজার মানুষের ভিড়। পুরসভা, দলীয় কার্যালয় হয়ে দেহ পৌঁছয় পানিহাটি শ্মশানে। সেখানে শেষকৃত্য হয়। কিন্তু রয়ে যায় একরাশ ধোঁয়াশা। কেন খুন হতে হল শাসকদলের কাউন্সিলরকে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন