Lok Sabha Election 2019

ভোট আসে ভয় নিয়ে

বসিরহাট ২ ব্লকের বেগমপুর-বিবিপুর পঞ্চায়েতের পানিগোবরা গ্রামে প্রায় ৫ হাজার মানুষের বাস।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ০১:৫৬
Share:

ছবি: এএফপি।

পুলিশের ভারী বুটের শব্দ এখন আর ওঁদের আশ্বস্ত করে না। বরং গ্রামের এক পাশে পোড়া গাছটা ভয়ের স্মৃতি জাগিয়েই রাখে!

Advertisement

বসিরহাট ২ ব্লকের বেগমপুর-বিবিপুর পঞ্চায়েতের পানিগোবরা গ্রামে প্রায় ৫ হাজার মানুষের বাস। ভোটারের সংখ্যা হাজার দু’য়েক। ২০১৬ সালের ১ জুন, বিধানসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরে দুষ্কৃতীরা গ্রামে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। ঘর-দোকান পুড়িয়ে দেয়। ভাঙচুর চালায় ঘরে-ঘরে। পুলিশের সামনেই সে সব ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে। ভোট এলেই তাই বসিরহাট উত্তর বিধানসভার পানিগোবরার বাসিন্দাদের কেবলই মনে হয়, এই বুঝি দুষ্কৃতীর দল ঝাঁপিয়ে পড়বে!

গ্রামের মানুষ শোনালেন সে দিনের ঘটনার কথা। তখনও দুপুরের খাওয়া হয়নি চা-দোকানি মুজিবর রহমানের। গ্রামে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা চলছিল। হঠাৎই মারমুখী হয়ে ওঠে দুষ্কৃতীরা। এক দল লোক মুজিবরের দোকান গুঁড়িয়ে দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের হাত থেকে রক্ষা পায় না মুজিবরের ঘরও। স্ত্রী নাজমাকে নিয়ে পালাতে বাধ্য হন তিনি। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় পাশের জিনাত আলির দড়ি কারখানা ও বাড়িতে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সে দিনের দুষ্কৃতী হামলায় পানিগোবরার ৩৭টি বাড়ি ও দোকান পুড়েছিল। ৬৫টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুঠপাট চলে। ভয়ে অধিকাংশ গ্রামবাসী সর্বস্ব ফেলে পালিয়েছিলেন।

কেন ঘটেছিল এমনটা? প্রশ্ন শুনেই ক্ষতিগ্রস্তেরা সমস্বরে বলে ওঠেন, ‘‘ভোট দেওয়ার অপরাধেই তো আমাদের ঘর-বাড়ি সব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’

ভোট তাই এখানে শুধুই আতঙ্কের স্মৃতিঘেরা।

আবার এসেছে ভোট। গ্রামে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল চলছে। কিন্তু তাতে স্বস্তিতে নেই মানুষ। অভিযোগ, ইতিমধ্যেই হুমকি শুরু হয়েছে। চাপা আতঙ্কের পরিবেশ।

ঘটনার পরে সরকারি ভাবে বাঁশ-পলিথিন, থালা-বাটি ছাড়া বিশেষ কিছুই সে দিন জোটেনি বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের। প্রশাসনের তরফ থেকে দরমার বেড়ার উপরে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে কয়েকটি ঘর করে দেওয়া হয়েছিল মাত্র। বিভিন্ন সংগঠন অবশ্য দুর্গতের পাশে দাঁড়িয়েছিল।

মুজিবর বলেন, ‘‘সে দিন পুলিশের আশ্বাস সত্ত্বেও আমাদের ঘর-দোকান সব পোড়ানো হয়েছিল। পুলিশের বুটের শব্দে তাই আমাদের কোনও ভরসাই ফেরে না।’’ জিনাত বলেন, ‘‘আমাদের ঘর, দোকান, কারখানা পুড়ল। সর্বস্ব লুঠ হল। আর উল্টে আমাদের লোকদের নামেই অভিযোগ করা হল।’’ রহিমা খাতুন, মমতাজ বেগম, সেলিমা বিবিরা বলেন, ‘‘এখানকার বড় অংশের জীবিকা নির্বাহ হয় দড়ি কারখানায় কাজ করে। সেই কারখানা পুড়িয়ে দেওয়া হল। এখানে আমরা সকলে মিলেমিশে থাকতাম। রাজনীতি আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করল। এতে সুবিধা হল দুষ্কৃতীদেরই।’’ রিনা বিবি, খাদিজা বিবি বলেন, ‘‘সে সময়ে গ্রামের তিন মহিলা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। দুষ্কৃতীদের ভয়ে তাঁদের নিয়ে খোলা মাঠে রাত জাগতে হয়েছিল আমাদের।’’

আড়াই বছর আগের সেই তাণ্ডবের চিহ্ন হিসেবে এখনও রয়ে গিয়েছে আগুনে ঝলসানো গাছটি। সে দিকে তাকিয়ে অনেককে বলতে শোনা গেল, ‘‘আবার ভোট এল, ফের না ঘরছাড়া হতে হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন