‘নতুন মুখ’, পরিচয়ে ভরসা ফেসবুকও

প্রকাশ্যে না হলেও মৃণালকে নিয়ে ইতিমধ্যেই দলের কর্মী-সমর্থকদের অনেকে আপত্তি তুলছেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবড়া শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০২:০৮
Share:

দেওয়াল লিখছেন মৃণাল। ছবি: সুজিত দুয়ারি

বারাসতের বিজেপি প্রার্থী হিসাবে বৃহস্পতিবার মৃণালকান্তি দেবনাথের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অধুনা হাবড়ার জমিদারবাড়ি গেট এলাকার বাসিন্দা মৃণাল পেশায় চিকিৎসক। কিন্তু রাজনীতিতে কার্যত আনকোরা মানুষটিকে তাঁর কেন্দ্রে অনেক কর্মী-সমর্থকই চেনেন না বলে দাবি বিজেপিরই একাংশের।

Advertisement

প্রকাশ্যে না হলেও মৃণালকে নিয়ে ইতিমধ্যেই দলের কর্মী-সমর্থকদের অনেকে আপত্তি তুলছেন। কারণ, তাঁরা চেয়েছিলেন বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের মুখোমুখি হোন কোনও পরিচিত হেভিওয়েট প্রার্থী। পরিস্থিতির আঁচ করতে পারছেন দলের নেতৃত্বও। শুক্রবার কর্মী-সমর্থকদের কাছে প্রার্থীকে পরিচিত করিয়ে দিতে বারাসতে একটি দলীয় সভা করা হয় জেলা বিজেপির তরফে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রার্থীর জীবনপঞ্জি নিয়ে প্রচার শুরু হয়েছে।

মৃণাল কিছু দিন দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি ছিলেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভাবে না থাকায় তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিজেপির এক নেতার প্রশ্ন, ‘‘যিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি, তাঁকেই প্রার্থী করাটা কতটা যুক্তিপূর্ণ হল?’’ তবে প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা হতেই শুক্রবার সকাল থেকে মৃণাল প্রচারে নেমে পড়েছেন।

Advertisement

কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এ দিন সকালে হাবড়ার দেশবন্ধুপার্ক এলাকায় দেওয়াল লিখেছেন। তারপরে যান স্থানীয় ঝরঝরিয়াতলা বাজারে। পথচারী, দোকানিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পরিচয় করেন। তাঁকে ভোট দেওয়ার আবেদনও জানান। মৃণালের সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী সন্ধ্যা।

বিজেপি প্রার্থীর কথায়, ‘‘একটা সময়ে মাস ছ’য়েক আমি দলের সহ সভাপতি পদে ছিলাম। পেশাগত কারণে দলীয় মিটিং-মিছিল বা কর্মকাণ্ডে সময় দিতে পারতাম না। তাই নিজেই পদ থেকে সরে গিয়েছিলাম। আজ প্রচারের মাধ্যমে সক্রিয় রাজনীতি শুরু করলাম।’’ জনমানসে পরিচিতির অভাব ভোটে সমস্যা তৈরি করবে না বলেই তাঁর মত। দলের নেতারাও অনেকে বলছেন, ‘‘কে প্রার্থী হলেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষ দলীয় প্রতীকে ভোট দেবেন। নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়ন দেখে ভোট দেবেন।’’

বারাসত লোকসভা কেন্দ্রটি হাবড়া, অশোকনগর, দেগঙ্গা, বারাসত, মধ্যমগ্রাম, রাজারহাট- নিউটাউন ও বিধাননগর বিধানসভা নিয়ে গঠিত। হাবড়া ছাড়া অন্য বিধানসভা এলাকার মানুষ মৃণালের নামও ঠিক মতো জানেন না। বারাসত-মধ্যমগ্রামের বাসিন্দারা এ দিন প্রার্থী সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন।

দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘আমাদের দলের সব প্রার্থীকে সাধারণ মানুষ চিনবেন এমন পরিস্থিতি নেই। কারণ আমাদের দলে মাত্র দু’জন সাংসদ। মৃণাল দলের সহ সভাপতি ছিলেন। জেলা সভাপতি কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে তিনি বোঝাবেন, যা বলার বলবেন।’’

২০১৬ সাল থেকে মৃণাল হাবড়ার বাসিন্দা। ১৯৪৯ সালে জন্ম অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলায়। ১৯৬৪ সালে দাঙ্গার সময়ে চলে আসেন হাবড়ায়। তখন তাঁর বয়স ছিল পনেরো। সত্তর বছর বয়সী মৃণাল পেশায় চিকিৎসক। দেশ বিদেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারির নানা ডিগ্রি পেয়েছেন তিনি। কর্মজীবনের বেশির ভাগ বিদেশেই কেটেছে। ২০০৮ সালে দেশে ফেরেন মৃণাল। নিজেই জানালেন, ‘‘দলের হাবড়া মণ্ডলের এক সদস্যের জোরাজুরিতে তাঁর কাছেই প্রার্থী হওয়ার আবেদন করে দিয়েছিলাম।’’

এ দিকে, বিজেপি থেকে অপরিচিত মুখ প্রার্থী হওয়ায় খুশি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরাই অনেকে প্রার্থীকে চেনেন না। তাঁরা ক্ষোভ জানাচ্ছেন। দলের লোকজনই যাঁকে চাইছেন না, তাঁকে সাধারণ মানুষ কী ভাবে ভোট দেবেন!’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন