চড়ুইভাতি: নাচ-গান সবই হল, তবে ডিজের দাপটে ঝালাপালা হল না কান। সোমবার টাকিতে তোলা নিজস্ব চিত্র
বড় দিনের সকালে জাঁকিয়ে শীত পড়তেই পিকনিকের ভিড়ে উপচে পড়ল টাকির ইছামতীর পাড়।
টাকি পুরসভা পরিচালিত অতিথি নিবাস, বেসরকারি লজে কোনও ঘর ফাঁকা নেই। টাকির পর্যটনে নতুন সংযোজন ইছামতীর বুকে ‘ফ্লোটেল’ শীঘ্রই চালু হলে মানুষের উৎসাহ আরও বাড়বে।
এবার টাকিতে ডিজে-র উৎপাত কমাতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে টাকি পুরসভা। গত কয়েক বছর শীতের মরসুমের শুরু থেকেই ডিজে–র দাপটে টাকি শহরের মানুষ ব্যতিব্যস্ত হতেন। এ নিয়ে টাকি পৌর নাগরিক কমিটি পিকনিকে ডিজে বন্ধের দাবিতে সরব হয়। টাকির বহু ক্লাব, সংগঠনও শব্দ দানবের বিরুদ্ধে সোচ্চার। পুরসভার পাশাপাশি পুলিশও যথেষ্ট সক্রিয় শীতের মরসুমে টাকির পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে। এ দিন শব্দের দাপট কমই দেখা গিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ইছামতী নদীতে নৌকোবিহার করেছেন অনেকে। ইকো পার্কেও ছিল ভিড়। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং পাখির দেখা মেলে।
গত বছর ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনে বিশেষ ভিড় না জমায় উদ্বিগ্ন ছিল টাকি পুরসভা। ব্যবসায়ীরাও চিন্তায় ছিলেন। তবে এ বার সেই চিন্তাটা এক রকম উধাও। ভিড় হয়েছে ভালই। টালিগঞ্জ থেকে আসা সুমন ঘড়ুই, কল্পনা ঘড়ুইরা বলেন, ‘‘টাকির কথা অনেক শুনেছি। এই প্রথম এখানে আসা। বেশ ভাল লাগছে। তবে শিশুদের খেলার উপকরণ আরও থাকলে ভাল।’’
বসিরহাট, বাদুড়িয়া, টাকির ইছামতী-সংলগ্ন এলাকায় চড়ুইভাতি করতে আসা মানুষের নিরাপত্তা ও অন্য সুযোগ-সুবিধা দিতে তৎপর ছিল তিনটি পুরসভা। পুলিশের সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও টহল দিতে দেখা গিয়েছে। গণ্ডগোল এড়াতে টাকিতে পুলিশি ব্যবস্থার পাশাপাশি টহল দিয়েছে বিএসএফ।
টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পর্যটকদের কথা ভেবে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিজে বক্স বাজানো বন্ধ করা হয়েছে। প্লাস্টিক ফেলা নিষিদ্ধ হয়েছে।’’
টাকির তুলনায় ভিড় কম হলেও বসিরহাটের মির্জাপুরে ইছামতীর পাশে তৈরি শহিদ দীনেশ মজুমদার শিশুপার্ক এবং ইছামতী পিকনিক গার্ডেনেও অনেক মানুষ এসেছিলেন। এখানে বাঁশের লম্বা সাঁকো পেরিয়ে শতাধিক ঝাউ গাছের বাগানের মধ্যে বিচুলির ছাউনি দেওয়া ঘরের সামনে বনভোজনের আনন্দটাই অন্য রকম। রান্না করার আলাদা জায়গা আছে। খেলার মাঠ, বাথরুম, স্নানের ব্যবস্থা, গাড়ি রাখার জায়গা— সবই আছে।
বসিরহাটের পুরপ্রধান তপন সরকার বলেন, ‘‘পর্যটকদের কথা ভেবে ইছামতী নদী-সংলগ্ন এলাকা সাজানোর উদ্যোগ করা হয়েছে।’’
বাদুড়িয়ার তারাগুনিয়া গ্রামে পিকনিক স্পটে পশু-পাখি, স্লিপ, দোলনা এবং পুকুরে ময়ুরপঙ্খি নৌকোয় জলভ্রমণ-সহ নানা বিনোদন উপভোগ সকরেছেন মানুষ। বাদুড়িয়ার পুরপ্রধান তুষার সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের এখানে পার্কগুলিতে যাতে মানুষ ঠিক মতো আনন্দ করতে পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কেউ যাতে কাউকে বিরক্ত না করতে পারে, সেটাও দেখা হচ্ছে।’’