অপুষ্টি থাকছেই, দায়ী পরিকাঠামো

প্রায় চার বছর ধরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশুদের অপুষ্টি দূর করার জন্য পদক্ষেপ করে রাজ্য সরকার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত লাল কার্ডধারী শিশুদের সংখ্যা পুরোপুরি কমল না দক্ষিণ ২৪ পরগনায়।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০২:১২
Share:

প্রায় চার বছর ধরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশুদের অপুষ্টি দূর করার জন্য পদক্ষেপ করে রাজ্য সরকার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত লাল কার্ডধারী শিশুদের সংখ্যা পুরোপুরি কমল না দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। রাজ্য সরকারের পক্ষে শিশুদের পুষ্টি-অপুষ্টি যাচাইয়ের জন্য তিন ধরনের কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে সমস্ত শিশু প্রবল অপুষ্টিতে ভুগছে, তাদের জন্য লাল কার্ড, যারা অল্প অপুষ্টিতে ভুগছে তাদের জন্য হলুদ কার্ড এবং যাদের কোনও সমস্যা নেই তাদের জন্য সবুজ কার্ড চালু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সাল পর্যন্ত এই জেলায় অপুষ্টিজনিত শিশুর সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার। গত বছর জুন মাসে সেই সংখ্যা কমে হয়েছিল ৮ হাজার। বর্তমানে তা ৩,২০৪ জন।

Advertisement

কী ভাবে কমল সংখ্যা?

জেলা সূত্রের খবর, শিশুদের চরম অপুষ্টি কমাতে কয়েক মাস আগে রাজ্য সরকার ‘আরোহণ’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে। যারা অপুষ্টিতে ভুগছে, তারা নিয়মিত ঠিকঠাক খাবার খাচ্ছে কিনা, সে দিকে লক্ষ্য রাখা, ওই শিশুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা, আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে ওই শিশুর অভিভাবককে একশো দিনের কাজে নিযুক্ত করাও ওই প্রকল্পের আওতায় পড়ে। তা ছাড়া, এলাকার চিকিৎসককে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নজর রাখার কথা। কর্মীদের নিয়মিত শিশুর ওজন পরীক্ষা করে বলতে হবে ওজন বেড়েছে না কমেছে। তা ছাড়া, অপুষ্টি শিশুদের প্রত্যেক দিন একটি করে ডিম সেদ্ধ এবং বাদাম, ছোলা, চিনি ও গমের গুঁড়োর লাড্ডু খাওয়ানো হয়।

Advertisement

এত সবের পরেও অবশ্য সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি। তার কারণ হিসাবে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামোরই দায়ী বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জান‌া গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ১১,২২৫টি। নিজস্ব ভবন রয়েছে মাত্র ২,৫০০টির ক্ষেত্রে। বাকিগুলি ভাড়া বাড়ির আটচালায় বা কারও দালানে চলে। প্রত্যেকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পরিষেবা দেওয়ার জন্য এক জন সহায়িকা ও এক জন কর্মী থাকার নিয়ম রয়েছে। সব জায়গায় তা নেই। ১০,২৪৭ জন কর্মী রয়েছেন। ওই সমস্ত কেন্দ্রগুলি নিয়মিত পরিদর্শন করার জন্য সুপারভাইজার রয়েছেন মাত্র ১৬৫ জন। দরকার আরও ৪৬৮ জন সুপারভাইজার।

মগরাহাট ২ ব্লকের কলস গ্রামের ১৩২ নম্বর কেন্দ্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ক্লাসে বছরের পর বছর ধরে চলছে অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র। জমি পাওয়া যায়নি বলে নতুন ভবন তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানালেন কেন্দ্রের কর্মী কৃষ্ণা মণ্ডল। ওই অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৫০। গভর্বতী ও প্রসূতি রয়েছেন আরও ৪০ জন। ৫০ জন শিশুর মধ্যে চরম অপুষ্টিতে ভুগছে চার জন শিশু।

এদের সকলেরই বয়সের তুলনায় ওজন কম। সাড়ে তিন বছরের রেজওয়ান সর্দারের ওজন মাত্র ৮ কেজি। চিকিৎসকদের মতে, তার ওজন হওয়ার কথা প্রায় ১২ কেজি। একই অবস্থা রহিবা লস্কর, জাকিয়া শেখ ও তাজমিনা মোল্লারও।

ব্লকের সিডিপিও শুভঙ্কর সমাদ্দার বলেন, ‘‘বছর খানেক আগেও এই এলাকায় ৩৯৯টি সেন্টারে চরম অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত ছিল ৫০০টি শিশু। তা কমিয়ে ১৮৩টি করা গিয়েছে। আরও কমানোর চেষ্টারা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন