প্রহৃত: এই যুবককেই মারধর করা হয়। নিজস্ব চিত্র
বসিরহাট পুলিশ জেলার বিভিন্ন থানায় গুজব রুখতে প্রচার করছে পুলিশ। জনপ্রতিনিধিরাও বার বার মানুষকে সচেতন করছেন। এই পরিস্থিতিতে আইন রক্ষার ভার যার উপরে, তেমন এক ভিলেজ পুলিশই জঙ্গি সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে মারধর করল বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে স্থানীয় ঘোষপাড়া এলাকায়। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বহু মানুষ। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও উঠছে। হিঙ্গলগঞ্জ থানার পুলিশ তরুণ মণ্ডল নামে ওই ভিলেজ পুলিশকে আটক করেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পাশাপাশি বিভাগীয় পদক্ষেপ করা হবে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হিঙ্গলগঞ্জের ঘোষপাড়া ত্রিমোহণীর কাছে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে দেখতে পেয়ে তরুণ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ভবঘুরে মানুষটি তেমন কিছু বলতে পারেননি। তরুণের সন্দেহ হয়, এই ব্যক্তি জঙ্গি। যেমন ভাবা, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় মারধর। ময়লা পোশাক ছিঁড়ে, লাথি, কিল, চড় মারতে থাকে তরুণ।
লোক জড়ো হয়ে যায়। ভিড়ের মধ্যে থেকে দু’চার জন বলার চেষ্টা করেছিলেন, সন্দেহভাজনকে থানায় নিয়ে গেলেই তো হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তরুণের হম্বিতম্বির সামনে কেউ পাত্তা পায়নি।
সে সময়ে এলাকায় দিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অরুণ পাল। তিনি প্রতিবাদ করেন। তা দেখে স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেরাও রুখে দাঁড়ায়। হাওয়া ঘুরছে বুঝে তরুণ সেখান থেকে সরে পড়ে। পরে ক্লাবের ছেলেরা অসুস্থ মানুষটিকে ক্লাবঘরে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা, খাবার, পোশাকের ব্যবস্থা করেন।
অরুণ বলেন, ‘‘নিরীহ একটা মানুষকে এ ভাবে মারধর করা হচ্ছে দেখে চুপ করে থাকতে পারেনি। এমন অন্যায়ের বিহিত হওয়া উচিত।’’ ক্লাবের পক্ষে ভবসিন্ধু ঘোষ, সুদেব ঘোষ, মলয় ঘোষরা বলেন, ‘‘আমরা কথা বলে যতটুকু বুঝেছি, লোকটা ভিনরাজ্যের। মাথা খারাপ। কেউ ওর কথা বুঝতে পারে না বলে ওকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় না। এমন একজন মানসিক ভারসাম্যহীনকে হঠাৎ সন্দেহের বশে মারধর করা অত্যন্ত অন্যায়।’’
সকলেরই বক্তব্য, গুজব রুখতে যাদের এগিয়ে আসার কথা, তারাই যদি গুজব রটিয়ে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয়, তা হলে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত পুলিশ-প্রশাসনের।
তরুণের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীদের দাবি, কয়েক মাস আগে তরুণ ব্যাঙ্ক ফেরত দুই নিরীহ যুবককে মারধর করে। স্থানীয় মানুষজন রুখে দাঁড়ালে সে একটি দোকানের মধ্যে গিয়ে সাটার ফেলে দেয়। ক্ষুব্ধ জনতা সাটার ভাঙার চেষ্টা করে। পুলিশ এসে উদ্ধার করে তরুণকে। পুলিশ জানায়, ওই ঘটনার পরে তরুণকে ছ’মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল। কাজে ফিরে সে ফের এমন কাণ্ড ঘটাল। তরুণের অবশ্য দাবি, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়।
হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘সব রকম ভাবে গুজবের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হচ্ছে। তা সত্ত্বেও এমন ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’