সফির আলি পাইক
সিলিকোসিসে ফের মৃত্যু হল মিনাখাঁর গোয়ালদহ গ্রামে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সফির আলি পাইক (৩৫)। গত দু’বছর ধরে তিনি সিলিকোসিসে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে মারা যান। এই নিয়ে এই গ্রামে এই রোগে মৃত্যু হল ১৮ জনের। যদিও গ্রামবাসীদের দাবি, মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২৫।
মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে মিনাখাঁর ধুতুরদহ পঞ্চায়েতের গোয়ালদহ গ্রামে বেশ কিছু মানুষ কাজের জন্য আসানসোলের জামুড়িয়ায় গিয়েছিলেন। পাথর ভাঙার কাজ করতেন তাঁরা। সেখান থেকেই শ্বাসকষ্ট নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। জানা যায়, সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা।
ফুসফুসের এই দুরারোগ্য রোগে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয় বেশ কয়েকটি সংগঠন। মৃত কয়েকটি পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দেয় কমিশন। কয়েক মাস আগে সেই নির্দেশের পরেও ক্ষতিপূরণ অবশ্য মেলেনি।
পরিবেশ কর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়কে একটি পৃথক রিপোর্ট দিতে বলেছিল কমিশন। সেই মতো রিপোর্ট দেন বিশ্বজিৎবাবু। ফের সিলিকোসিসে মৃত্যুর কথা জেনে তিনি বলেন, ‘‘একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ সত্ত্বেও সরকারের টনক নড়েনি। কেউ সাহায্য পায়নি।’’ ওই এলাকায় আরও জনা পনেরো দরিদ্র মানুষ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন বলে জানান তিনি।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জামুড়িয়ায় কাজ করতে গিয়েছিলেন সফির। শ্বাসকষ্ট নিয়ে বছর দু’য়েক ধরে ভুগছিলেন। সিলিকোসিস হয়েছে বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। শীর্ণকায় চেহারা হয়ে যায়। মিনাখাঁ ও কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা করান সফির। এক সময়ে চলে আসেন বাড়িতে। গত কয়েক মাস বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। শ্বাসকষ্ট বাড়ায় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি একবার গোয়ালদহ গ্রামে গিয়ে তাঁর পরিবারকে সাহায্য করেন। অসুস্থদের পাশে দাঁড়ান বিডিও এবং কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
মৃত্যুর ঘটনা শুনে সাংসদ বলেন, ‘‘খারাপ ঘটনা। একবার ওই গ্রামে গিয়েছিলাম। আমরা গোয়ালদহ গ্রামের মানুষের পাশে আছি। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।’’
যদিও এলাকার মানুষের অভিযোগ, সরকারি ভাবে সাহায্য তেমন কিছুই পাননি কেউ। এখনও গোয়ালদহের বেশ কয়েকজন এই রোগে আক্রান্ত। বিছানা থেকে ওঠার শক্তি নেই তাঁদের। কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল হক, সালেয়া বিবি বলেন, ‘‘সিলিকোসিস রোগীর প্রয়োজন অক্সিজেন ও জরুরি ইঞ্জেকশন। কিন্তু এই গ্রামের মানুষ এতটাই গরিব, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার গ্রামের একজন অক্সিজেন কেনা সত্ত্বেও এই রোগে তাঁর ছেলেকে হারাতে হয়েছে।’’
মৃতের স্ত্রী বলেন, ‘‘সংসারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটা মারা গেলেন। ওঁর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সব শেষ। এ বার তিন সন্তানকে নিয়ে সংসার চলবে কী ভাবে!’’ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি অবশ্য দিচ্ছে প্রশাসন। তবে এমন আশ্বাস তাঁরা ঢের শুনেছেন, বলছেন গোয়ালদহের মানুষ।