ঝড়-বৃষ্টিতে গাড়ি চলাচলে সমস্যা, ক্ষতি মাটির বাড়ির

বারাসত মহকুমার বেশ কিছু জায়গায় গাছ পড়ে যাতায়াতে সমস্যা হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ফসলেরও। সোমবার ভোরে দেগঙ্গার সিংহেরআটি গ্রামে একটি টালির ঘর ভেঙে পড়ে ঘুমন্ত এক দম্পতির উপরে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৩
Share:

দেগঙ্গায় ধসল বাড়ি। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

নিম্নচাপের জেরে ভোর রাত থেকে গোটা দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি চলছে। কোথাও মুষলধারে, কোথাও বা ঝিরঝিরে। সেই সঙ্গে ঝড়ও হচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় কোথাও ঝড়ে উপড়ে পড়েছে গাছ। যানবাহন রাস্তায় কম নেমেছে। ট্রেন চলাচলেও বিঘ্নিত ঘটেছে।

Advertisement

বনগাঁ, হাবরায় সোমবার বিকেল পর্যন্ত নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে যায়নি। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে বৃষ্টির জন্য রাস্তায় লোকজন কম ছিল। ঝড় তেমন হয়নি। দু’একটি নিচু জায়গায় সামান্য জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। প্রায় একই ছবি পলতা, ইছাপুর, ভাটপাড়া, জগদ্দলেও। কিছু জায়গায় জল জমেছে। বাজারহাট, স্কুল-কলেজ, সরকারি অফিসে হাজিরা অন্য দিনের তুলনায় কম সোমবার।

বারাসত মহকুমার বেশ কিছু জায়গায় গাছ পড়ে যাতায়াতে সমস্যা হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ফসলেরও। সোমবার ভোরে দেগঙ্গার সিংহেরআটি গ্রামে একটি টালির ঘর ভেঙে পড়ে ঘুমন্ত এক দম্পতির উপরে। গুরুতর জখম মহিলাকে গ্রামবাসীরা উদ্ধার করেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা সইফুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘গিয়ে দেখি চাপা পড়া টালির ফাঁক থেকে একটি হাত বেরিয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসীরা মিলে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করি।’’ পরে দেগঙ্গা থানার পুলিশ এসে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। দেগঙ্গার কুঁচেমোড়া গ্রামের কেতাব আলি বলেন, ‘‘ঝড়ো হাওয়ার গতি এতটাই ছিল যে পাকা ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পেঁপে গাছ ভেঙে পড়েছে। নুইয়ে গিয়েছে বেগুন গাছ। এই বৃষ্টি বন্ধ না হলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’’

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) অরূপ দাস বলেন, ‘‘এই ঝড়-বৃষ্টির জেরে আনাজ ও ধান চাষের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা গিয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।’’

বারাসত মহকুমার মতো বসিরহাট মহকুমায়ও একই চিত্র। রাস্তাঘাটে লোকজন কম ছিল। ছুটির পরে প্রথম সরকারি অফিসকাছারি খুললেও হাজিরা কিছুটা কম ছিল। যানবাহনে প্রভাব পড়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ সংস্থার সরকারি প্রতিনিধি গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। জ্বরে আক্রান্ত এলাকার মানুষের যাতায়াতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকেও নজর হয়েছে।’’

বৃষ্টিতে ডায়মন্ড হারবার পুরসভার বেশ কিছু ওয়ার্ডের রাস্তা ডুবেছে গিয়েছে। পুকুর কানায় কানায় ভর্তি। কিছু এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ডায়মন্ড হারবার মহকুমা ও জয়নগরে ভোর থেকে বিদ্যুৎ ছিল না। সন্ধ্যার পরে অবশ্য বিদ্যুৎ এসেছে। টানা বৃষ্টির জন্য রেল চলাচল অনিয়মিত। রাস্তায় মানুষজনের দেখা নেই। বাসও তেমন চোখে পড়েনি। মহকুমাশাসক শান্তনু বসু বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর আসেনি। তবে নজর রয়েছে।’’

এ দিকে, টানা ঝড়-বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ক্যানিং মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। কোথাও গাছ ভেঙে ব্যাহত হয় যান চলাচল। অনেক জায়গাতে ভেঙে পড়েছে মাটির বাড়ি। জলে তলিয়ে গিয়েছে ধানজমি। বাসন্তীর চুনাখালির ১০ নম্বর বড়িয়ায় রাস্তার উপরে গাছ ভেঙে পড়ায় কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় চুনাখালি-ক্যানিং রুটে। ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক অদিতি চৌধুরী বলেন, ‘‘বেশ কিছু বাড়ির আংশিক ক্ষতির খবর পেয়েছি। আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। এলাকায় ত্রিপল ও প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠানো হয়েছে।’’

বাসন্তী, গোসাবা, ক্যানিং ১ ও ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৭০০ মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুঁটি পড়ে গিয়ে মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে এখনও পর্যন্ত নদী বাঁধ ভাঙনের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর জানান, ঝড়ে এই বিধানসভা এলাকায় প্রচুর বাড়ি, গাছ ভেঙে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকত মোল্লা বলেন, ‘‘এই ঝড়-বৃষ্টিতে প্রচুর মানুষের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সব থেকে বেশি।’’

বাসন্তীর চাষিরা আশঙ্কায় ভুগলেও কাকদ্বীপ মহকুমার চাষিরা অবশ্য অন্য কথা বলছেন। নামখানার হরিপুর পঞ্চায়েতের বড় চাষি চন্দ্রমোহন খাঁড়া ১২ বিঘে জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলেন। তিনি জানান, এ বছর অগস্টে অতিবৃষ্টির পর থেকে আর তেমন বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু রবি ও সোমবারের বৃষ্টিতে তাই মুখে হাসি ফুটেছে অনেক চাষির। এতে শীতের মরসুমে রবি চাষের ক্ষেত্রেও সুবিধাই হবে বলে দাবি করছে কৃষি দফতর। তবে আনাজ চাষে সামান্য ক্ষতি হয়েছে কয়েকটি জায়গায়। চন্দ্রমোহনবাবুর কথায়, ‘‘ধানের গোড়ায় জল হয়েছে। এতে আমাদের সারের খরচ কিছুটা কমে গেল। আরও দু’তিন দিন বৃষ্টি হলেও ক্ষতি হবে না। বরং লাভই রয়েছে।’’

অতিরিক্ত কৃষি অধিকর্তা (ডায়মন্ড হারবার) অভিনন্দন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ক্ষয়-ক্ষতির কোনও খবর নেই। যে রকম ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তা আরও হলেও ফসলের জন্য ভাল। রবি শস্য চাষে উপকার পাবেন চাষিরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন