Hasnabad

পরীক্ষাকেন্দ্রে সময়ে পৌঁছবেন কী করে, দুশ্চিন্তায় অনেকেই

নিট পরীক্ষা দিতে হাসনাবাদ থেকে প্রায় ৯৪ কিলোমিটার উজিয়ে বেহালা যেতে হবে বিশপুর গ্রামের মেঘা পান্ডাকে।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ

হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৫০
Share:

পরীক্ষার জন্য চলছে প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র

ট্রেন কবে চলবে ঠিক নেই। বাস অনিয়মিত। এই পরিস্থিতিতে নিট পরীক্ষা দিতে হাসনাবাদ থেকে প্রায় ৯৪ কিলোমিটার উজিয়ে বেহালা যেতে হবে বিশপুর গ্রামের মেঘা পান্ডাকে। কী ভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছবেন, তা ভেবেই আপাতত ঘুম ছুটেছে মেঘার।

Advertisement

এ বছর তকিপুর রাজলক্ষ্মী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছেন মেঘা। স্বপ্ন, চিকিৎসক হওয়ার। তাই বেশ কিছু দিন ধরেই নিট পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ১৩ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষার সিট পড়েছে বাড়ি থেকে প্রায় ৯৪ কিলোমিটার দূরে বেহালায়। পৌঁছতে হবে সকাল ১১টার আগে। করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা হোক, চাইছেন না মেঘা। মেঘা জানান, তাঁর বাবা শিক্ষাবন্ধু হিসেবে কাজ করেন। খুব কম বেতন পান। তাই বেশ কয়েক হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে বেহালা যাওয়া-আসার খরচ বহন করাটা তাঁদের পরিবারের পক্ষে সমস্যার। মেঘার কথায়, ‘‘১১ ও ১২ তারিখ লকডাউন। তাই পরীক্ষার আগের দিন বেহালা গিয়ে থাকব, সেই উপায়ও নেই। একে তো প্রচুর ভাড়া, তার উপরে গাড়ি ভাড়া করে গেলে ঝুঁকিও কম নয়। ঠিক সময় পৌঁছতে পারব কিনা জানি না। কোনও গন্ডগোল হলে পুরো বছরটা নষ্ট হবে।’’ তাঁর মতে, দেরি যখন হয়েছে, আর কয়েক দিন পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা নেওয়া হলেই ভাল হত। তা ছাড়া করোনার ভয়ও রয়েছে।

করোনা পরিস্থিতিতে নিট ও জেইই পরীক্ষা পড়ায় মেঘার মতোই সমস্যায় পড়েছেন বহু পড়ুয়া। বেশিরভাগ পড়ুয়াদের প্রশ্ন, যখন পরীক্ষা পিছিয়েছে তা হলে আর কিছু দিন পরে হচ্ছে না কেন? এই সময়ে বাড়ি থেকে বহু দূরের পরীক্ষাকেন্দ্রে পড়ুয়ারা সঠিক সময়ে কী ভাবে পৌঁছবেন সেটাই তাঁদের ভাবাচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে করোনার ভয়।

Advertisement

টাকির বাসিন্দা সৃজিত পাখিরা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ২০১৯ সালে। তারপর থেকেই নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লিভারের সমস্যা রয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শে করোনার জন্য এখন বাড়ির বাইরে বেরোনো বারণ। তাঁর সিট পড়েছে কলকাতার মিন্টো পার্কে। সৃজিত জেইই পরীক্ষাও দেবেন। পরীক্ষা শুরু ১ সেপ্টেম্বর থেকে। চলবে ৬ তারিখ পর্যন্ত। সৃজিতের ৬ তারিখ পরীক্ষা হবে সল্টলেকে। করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ উপেক্ষা করে কী ভাবে পরীক্ষা দিতে যাবেন, ভেবে পাচ্ছেন না সৃজিত।

তাঁর দিদি শ্রীপর্ণা পাখিরাও নিট দেবেন এ বার। তাঁর সিট পড়েছে দমদমে। শ্রীপর্ণা বলেন, ‘‘বাড়িতে বৃদ্ধ বাবার হার্ট ও লিভারের সমস্যা। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। মা-ও অসুস্থ। তাই করোনা-আবহের মধ্যে পরীক্ষার দিন আমাদের সঙ্গে বাবা-মাকে নিয়ে যাওয়াটা খুব ঝুঁকির। স্বাভাবিক সময় হলে ট্রেনে করে সহজেই চলে যাওয়া যেত। অথচ এখন দু’টি গাড়ি ভাড়া করে দু’জনকে যেতে হবে দুই দিকে। পরীক্ষাটা যদি কয়েক মাস পরে হত, ভাল হত।’’ শ্রীপর্ণার আশঙ্কা, যদি পরীক্ষাকেন্দ্রে গাড়ির সমস্যার জন্য সময়ে পৌঁছতে না পারেন, তখন কী হবে!

এখনও অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করেননি শ্রীপর্ণা। বললেন, ‘‘কেন্দ্র সরকার বলছে অল্প সময়ে অনেক পড়ুয়া অ্যাডমিট ডাউনলোড করেছেন। অর্থাৎ পড়ুয়ারা সকলেই রাজি পরীক্ষা দিতে। যুক্তিটা অবাস্তব। ডাউনলোড করার অর্থ এখনই পড়ুয়ারা সকলে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী, এমন নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন