খোঁড়া ঘোড়ার দায়িত্ব নিতে চান কাকদ্বীপের দীপক

রবিবার রাত থেকে রাস্তার ধারে কাটা পা নিয়ে ছটফট করল একটি বেওয়ারিশ ঘোড়া। তার ঘোড়ার দায়িত্ব নেবে কে, তা নিয়ে সোমবার হারউড পয়েন্ট থানার বলদেবপুরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলল টানাপড়েন। শেষে অসুস্থ ঘোড়ার সেবা-শুশ্রূষার দায়িত্ব নিলেন কৈলাশ নগরের দরিদ্র শ্রমিক দীপক মণ্ডল।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৮ ০১:২৬
Share:

আহত: ঘোড়ার যত্ন করছেন দীপক।—নিজস্ব চিত্র

মরা হাতির দাম না হয় লাখ টাকা। কিন্তু খোঁড়া ঘোড়া? পাঁচ পয়সাও দর নেই তার।

Advertisement

আর তাই রবিবার রাত থেকে রাস্তার ধারে কাটা পা নিয়ে ছটফট করল একটি বেওয়ারিশ ঘোড়া। তার ঘোড়ার দায়িত্ব নেবে কে, তা নিয়ে সোমবার হারউড পয়েন্ট থানার বলদেবপুরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলল টানাপড়েন। শেষে অসুস্থ ঘোড়ার সেবা-শুশ্রূষার দায়িত্ব নিলেন কৈলাশ নগরের দরিদ্র শ্রমিক দীপক মণ্ডল।

রবিবার রাত থেকে ঘোড়া পড়েছিল পথের ধারে। সোমবার ভোরে লোকজনের নজরে পড়ে। সামনের বাঁ পা হাঁটু থেকে কাটা ছিল। তাতে দায় সারা ব্যান্ডেজ জড়ানো। চুঁইয়ে আসছিল রক্ত। লোকজনের ভিড় জমলেও কেউ ঘোড়াটিকে পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নেয়নি।

Advertisement

বেলার দিকে খবর পেয়ে কাকদ্বীপের পশু চিকিৎসাকেন্দ্রের দল আসে। সুশ্রূষা করে। কিন্তু ঘোড়ার দায়িত্ব নিতে চায়নি। দু’একজন আহত পশুটিকে ঘাস-বিচালি খেতে দেয়।

বন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু সেখান থেকে জানানো হয়, গৃহপালিত পশু বলে ঘোড়ার দায়িত্ব তারা নিতে অপারগ। কাকদ্বীপে পশুদের দেখাশোনা করার মতো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও নেই। কৈলাশ নগরের দীপকবাবুর কানে ওঠে ঘটনাটা।

তাঁর কথায়, ‘‘আমি সকালে যাচ্ছিলাম। ঘোড়াটির অবস্থা দেখে আটকে পড়ি। পুলিশ, পশু চিকিৎসা বিভাগ, প্রশাসন সকলে এসে ঘুরে গেল। কেউ যদি না নিতে চায়, তবে আমিই ওকে বাড়ি নিয়ে যাব। আমার খাবার জুটলে ওরও জুটবে।’’

দীপকবাবুর পরিবারে ছ’জন সদস্য। স্থায়ী কোনও কাজ করেন না দীপক। তবুও দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছেন। স্থানীয় এক পশু চিকিৎসকের সাহায্যে ঘোড়াটির ক্ষত মেরামত করাচ্ছেন। সুস্থ হলে সেটিকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তুলবেন বলেও জানালেন।

বিষয়টি পুলিশও জানে। তাদের অনুমান, কলকাতা থেকে গ্রামে-গঞ্জে ঘোড়া নিয়ে খেলা দেখাতে আসে অনেক মাদারি। পায়ে ক্ষত হওয়ার পরে অকেজো ঘোড়াটিকে হয় তো তারাই রাতের অন্ধকারে ফেলে রেখে চলে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন