ঝুলছে হুকিংয়ের তার। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রতি সপ্তাহে একাধিক ট্রান্সফর্মার নষ্ট হচ্ছে। দিনের পর দিন লোডশেডিং বেড়ে চলেছে। যাঁরা বিল দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তাঁরাও এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ।
এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির লোকসানের বহরও বেড়েই চলেছে। বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ আটকাতে সরকার নিয়োজিত ‘কাস্ট ইন্টারন্যাশন্যাল’ নামে একটি সংস্থা জেলায় প্রতিটি ব্লকে ব্লকে গ্রাহকদের সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করেছে।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জুলাই মাস থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও জলপাইগুড়ির দুই জেলায় ওই সংস্থার পক্ষ থেকে গ্রাহকদের নিয়ে কর্মশালা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবার ১ ও ২, মগরাহাট ১ ও ২, কুলপি, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, মথুরাপুর ১ ব্লকে কর্মশালা হয়েছে। ওই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, স্টেশন ম্যানেজার, এলাকার প্রধান, উপপ্রধান এমনকী সদস্যরাও। কী ভাবে নতুন সংযোগ নেওয়া যায়, মিটার রিডিং নিয়ে, মিটার সংযোগ নিতে হলে কী করতে হবে—এই সব বিষয়ে বলা হয়েছে। নতুন মিটার নিতে গেলে সিকিউরিটি টাকা জমা রাখা গ্রাহকের কোনও অভিযোগ এবং তার প্রতিকার সম্পর্কেও বলা হচ্ছে। এই সভার মাধ্যমে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়ে আরও সচেতন করা হচ্ছে।
ওই কাস্ট ইন্টারন্যাশন্যাল সংস্থার প্রোজেক্ট অ্যাসিস্টেন্ট সমর মাইতি বলেন, ‘‘আমাদের কর্মশালার মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। এমনকী বিদ্যুৎ চুরি রুখতে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।’’
বিদ্যুৎ দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর কয়েক আগে মগরাহাটের নৈনান গ্রামে হুকিং এর লাইন কাটতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল। তাতে দু’পক্ষের কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছিল। তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। তারপর থেকে প্রায় বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে দফতরের তেমন হেলদোল ছিল না। ফলে গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ চুরি অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। জেলার এক স্টেশন ম্যানেজার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, এই এলাকায় প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি। চাইতে গেলেই বলে দিচ্ছে সংযোগ খুলে নিন। কেউ আবার সামান্য কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে পরের কিস্তিতে দিয়ে দেবেন বলছেন।
তাঁর আরও অভিযোগ, এলাকায় হুকিং চলছে। অতিরিক্ত লোডের ফলে ট্রান্সফর্মার পুড়ছে। এ ভাবে বার বার ট্রান্সফর্মার বদলানো সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। না বদলে দিলে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। এই সব কিছু বন্ধ করতেই এই সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হল।