বাড়ি ফিরলেন মানসিক ভারসাম্যহীন রণজিৎ

পরিবারের মানুষদের কাছে পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন রনজিৎ মণ্ডলের দু’চোখ জলে ভরে যায়। দাদাকে পেয়ে আপ্লুত সুদূর বিহার থেকে আসা ভাই সনজিৎও। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তবাসীদের প্রচেষ্টাতেই দাদাকে খুঁজে পেলাম। এখানকার মানুষের কথা কখনও ভুলব না।’’

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০২:০৮
Share:

বাড়ি-ফেরা: বিহারে ফিরছেন রণজিৎ। নিজস্ব চিত্র

নতুন পোশাক পরিয়ে, ফুলের মালা গলায় দিয়ে, রসগোল্লা খাইয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ভিন রাজ্যের এক বাসিন্দাকে ঘরে ফেরালেন হিঙ্গলগঞ্জের মানুষ। তবে এই প্রথম নয়। আগেও একাধিক মানসিক ভারসাম্যহীনকে বাড়ি ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন হিঙ্গলগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা।

Advertisement

পরিবারের মানুষদের কাছে পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন রনজিৎ মণ্ডলের দু’চোখ জলে ভরে যায়। দাদাকে পেয়ে আপ্লুত সুদূর বিহার থেকে আসা ভাই সনজিৎও। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তবাসীদের প্রচেষ্টাতেই দাদাকে খুঁজে পেলাম। এখানকার মানুষের কথা কখনও ভুলব না।’’

গত ২৫ মে হিঙ্গলগঞ্জ বাজারে বছর আঠাশ-তিরিশের এক যুবককে ইতস্তত ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছিল। কখনও নদীর ধারে, কখনও বাজারে ঘোরাফেরা করতে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে বোঝা যায়, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন। বাজার কমিটির পক্ষে একটি ঘরে তাঁর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে কেবল জানা যায়, তাঁর নাম রনজিৎ মণ্ডল, বাড়ি বিহারের দ্বারভাঙায়।

Advertisement

এইটুকু তথ্যের উপর নির্ভর করে বাজার কমিটির সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ ইন্টারনেট ঘেঁটে সেখানকার বিভিন্ন থানার নাম-নম্বর জোগাড় করে রনজিতের ছবি পাঠান। ফল মেলে। বিহারের বহুড়া থানার অফিসার ইন-চার্জ সঞ্জয় কুমার জানান, মধুবন গ্রামের বাসিন্দা ভুট্টা মণ্ডল-রামসাগরদেবীর ছেলে রণজিৎ নিখোঁজ। ছবি দেখে রণজিৎকে শনাক্তও করা হয়। ২৮ মে দাদাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিহার থেকে হিঙ্গলগঞ্জে আসেন তাঁর ভাই সনজিৎ-সহ পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু গোটা হিঙ্গলগঞ্জ খুঁজেও রণজিতের খোঁজ মেলে না। কী ভাবে সকলের চোখ এড়িয়ে তিনি নিখোঁজ হলেন, তা বুঝে উঠতে পারেন না বাজার কমিটির সদস্যরা।

ভাই সনজিতের কাছ থেকে অবশ্য তত ক্ষণে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে চোখের সামনে গাড়ি দুর্ঘটনায় বড়দার মৃত্যুর পর মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন রণজিৎ। চিকিৎসার জন্য তাঁকে মহারাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নিখোঁজ হন রণজিৎ।

রণজিতের খোঁজে ফেরিঘাট থেকে শুরু করে গাড়িতে ছবি-সহ পোস্টার লাগানো এবং মাইকে প্রচারও করা হয়। হোয়াটসঅ্যাপে ছবি পাঠিয়ে তাঁর খোঁজ দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়। দাদাকে না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান তাঁর ভাই এবং অন্যরা। বাজার কমিটির সম্পাদক সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘হিঙ্গলগঞ্জ থেকে ছেলেটি নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন পর কলকাতার রাজারহাটের নারকেলবাগান এলাকা থেকে রবিউল ইসলাম নামের একজন জানান, হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ছবির মতো একজন সেখানে আছেন।’’

রণজিৎকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হিঙ্গলগঞ্জে আনা হয়। সেই খবর পেয়ে ফের হিঙ্গলগঞ্জে আসেন রনজিতের আত্মীয়রা। ৩১ মে সংক্ষিপ্ত এক অনুষ্ঠান করে রনজিৎকে তুলে দেওয়া হয় তাঁর ভাইয়ের হাতে। বাজার কমিটির তরফে জানা গেল, গত কয়েক বছরে হারিয়ে যাওয়া অন্তত ১৫ জন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে তাঁরা পরিজনের হাতে তুলে দিতে পেরেছেন।

এ দিন সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গাড়িতে উঠলেন রনজিৎ। সুস্থ হলে হিঙ্গলগঞ্জে আবার আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে গেলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন