হাসপাতালে হেনস্থা

দুই ওয়ার্ড কর্মী, আয়া ঘাড়ধাক্কা দিচ্ছিলেন শীর্ণকায় যুবককে। যুবক ওয়ার্ডের বাইরে মাটিতে পড়ে যেতে আয়া বালতি করে হুড় হুড় করে জল ঢেলে দিলেন যুবকের গায়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:১১
Share:

আর্তি: মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছেন যুবক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

দুই ওয়ার্ড কর্মী, আয়া ঘাড়ধাক্কা দিচ্ছিলেন শীর্ণকায় যুবককে। যুবক ওয়ার্ডের বাইরে মাটিতে পড়ে যেতে আয়া বালতি করে হুড় হুড় করে জল ঢেলে দিলেন যুবকের গায়ে। বালতি করে আরও জল চলে এল হাতে হাতে। সবটাই ঢালা হচ্ছিল যুবকের গায়ে। তিনি তখন মাটিতে পড়ে হাতজোড় করে কেঁদে চলেছেন। পাশে দাঁড়িয়ে তখন এ ওর গায়ে ঢলে পড়ে হেসে চলেছেন আরও কয়েকজন আয়া।

Advertisement

রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ঘটনাটা চোখে পড়ে অন্যান্য রোগীর আত্মীয়দের। তাঁরা চিৎকার-চেঁচামিচি জোড়েন। যাঁরা এতক্ষণ যুবককে হেনস্থা করছিলেন, তাঁরা ওয়ার্ডের কোলাপসিবল গেটে তালা ঝুলিয়ে ভিতরে ঢুকে যান। ভেজা শরীরে তখনও ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় বসে কেঁদে চলেছেন যুবক। হাতজোড় করে তাঁকে উদ্ধারের জন্য কাকুতি-মিনতি জানাচ্ছেন।

মুখে মুখে নিমেষে রটে যায়, চিকিৎসাধীন এক রোগীর সঙ্গে এ হেন আচরণের কথা। লোক জড়ো হয়ে যায়। উত্তেজিত জনতাকে সামলাতে পুলিশ আসে। তারাই পরিস্থিতি সামাল দেয়। যুবককে ফের পাঠানো হয় ওয়ার্ডে।

Advertisement

গোটা ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি তুলেছেন রোগীর আত্মীয় ও স্থানীয় মানুষজন। হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাত বলেন, ‘‘ঘটনার কথা জেনেছি। প্রাথমিক ভাবে ওই ঘটনায় জড়িত এক আয়াকে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘এমন অমানবিক আচরণ মেনে নেওয়া হবে না। হাসপাতাল সুপারকে বলেছি, তদন্ত কমিটি করে দোষীদের চিহ্নিত করে কড়া ব্যবস্থা নিতে।’’

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে সুজয় যাদব নামে এক ব্যক্তি রাস্তায় জখম অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকা ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রথমে তাঁকে রাখা হয়েছিল শল্যবিভাগে। পরে ডায়েরিয়া ওয়ার্ডের মধ্যে একটি ঘরে রেখে চিকিৎসা চলছিল। সুপার বলেন, ‘‘মানসিক ভারসাম্যহীনদের ডায়েরিয়া ওয়ার্ডের মধ্যে একটি আলাদা ঘরে রাখা হয়। ওই যুবককে সেখানেই রাখা হয়েছিল। তাঁর বাড়ির লোকজনের খোঁজ করা হচ্ছে।’’ পুলিশের অনুমান, যুবকের বাড়ি বিহারে। কোনও ভাবে পথ ভুলে এখানে চলে এসেছিলেন।

কয়েকজন রোগীর আত্মীয়দের কথায়, ‘‘হতে পারে ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন। কিন্তু সে তো চিকিৎসাধীন রোগী। তাকে তো আরও যত্ন সহকারে রাখা উচিত। উল্টে এমন অমানবিক আচরণ করা হল।’’ রোগীর আত্মীয়দের কারও করাও মতে, ‘‘আমাদের রোগীর সঙ্গেও তো এমন আচরণ করা হতে পারে। হাসপাতালে ভর্তি করেও তা হলে নিশ্চিন্ত হওয়ার উপায় নেই দেখছি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন