আত্মীয়ের সঙ্গে সমর। নিজস্ব চিত্র
মাস দু’য়েক ধরে রাস্তায় ঘোরাফেরা করছিলেন অচেনা এক যুবক। তাঁকে দেখেই এলাকার লোকজন বুঝতে পারেন যে মানসিক ভারসাম্যহীন তিনি। শেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দিয়ে রবিবার তাঁকে বাড়ির লোকের হাতে তুলে দিলেন মিনাখাঁ গ্রামের মানুষ।
যুবকের নাম, সমর মালিক। বাড়ি, আরামবাগের চাঁদুর গ্রামে। সাত বছর পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশি মালিক দম্পতি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও ভাবে বছর বত্রিশের সমর মিনাখাঁর বাজার চত্বরে চলে আসেন সমর। ব্যবসায়ীরা জানান, কিছুদিন ধরেই তিনি এ দিক ও দিক ঘুরছিলেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। শীতের পোশাক, খাবার কিনে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা কোনও ভাবে জানতে পারছিলেন না তাঁরা। অনেক চেষ্টার পর শেষে ওই যুবক আরামবাগে তাঁর বাড়ি বলতে পারেন। জানতে পেরে প্রদ্যুৎ রায়, রাকেশ মাহাত, অশোক রায়, সুব্রত ত্রিপাঠিরা আরামবাগে তাঁদের এক পরিচিতর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। উজ্জ্বল আদক নামে ওই যুবকের কাছে সমরের ছবি পাঠানো হয়। এরপরেই উজ্জ্বল সোশ্যাল মিডিয়ায় সমরের ছবি দেন।
শুক্রবার রাতে ওই যুবকের প্রতিবেশী রাজকুমার মালিক উজ্জ্বলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সমরের বাবার নাম ও বাড়ির ঠিকানা জানান।
পুলিশ জানান, চাঁদু গ্রামের বাসিন্দা বনমালী মালিক ও তাঁর স্ত্রী চণ্ডীর চার সন্তানের মধ্যে ছোট সমর। বনমালী দিনমজুরের কাজ করেন। বনমালী জানান, ছোট থেকেই অসুস্থ সমর। সুযোগ পেলেই নদীর ধারে গিয়ে জলের শব্দ শুনে আপন মনে গান গাইত। একুশ বছর বয়সে সমরের বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যেই তাঁর স্ত্রী ছেড়ে চলে যান।
এরপর আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন ছেলেটা। সাত বছর আগে একদিন হঠাৎ নিখোঁজ হন সমর। রবিবার সকালে মিনাখাঁয় এসেছিলেন সমরের বাবা-মা, আত্মীয়েরা। বাবা-মাকে দেখেই চিনতে পারেন সমর। আনন্দে কেঁদেও ফেলেন। তাঁর মা বলেন, ‘‘কোনও দিন ভাবিনি ছেলেকে ফিরে পাব। মিনাখাঁর লোকজনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’
মিনাখাঁ ছাড়ার আগে সমরের হাতে তুলে দেওয়া হয় কয়েক হাজার টাকা। প্রদ্যুৎ, রাকেশরা বলেন, ‘‘সারাক্ষণ ছেলেটা আমাদের পাশে পাশে ঘুরত। ওর সরল মুখ দেখলে মায়া হত। ওকে পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে আমাদের খুব ভাল লাগছে।’’