জখম সুমন। নিজস্ব চিত্র।
চারিদিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতা। তারই মধ্যে বড়সড় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে গেল হাবরায়।
সোমবার তখন বেলা সওয়া ১২টা। বাদুড়িয়া থানার বাগজোলার বাসিন্দা দেবব্রত ভট্টাচার্য ভাইপো সুমনকে মোটর বাইকের পিছনে বসিয়ে গ্রামের পিচের রাস্তা ধরে হাবরা শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁদের দাবি, কিছুক্ষণ ধরেই অন্য একটি বাইকে তিন যুবক আসছিল পিছন পিছন। দেবব্রতবাবুরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। তাঁদের মোটর বাইকটি যখন স্থানীয় বাউগাছি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে পৌঁছয়, পিছন থেকে বাইকটি আচমকাই সামনে চলে এসে পথ আটকায়। দেবব্রতবাবুদের বাইকের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে ওই তিন যুবক। সে সময়ে আরও দু’টি বাইকে চারজন সেখানে এসে হাজির হয়। রাস্তা থেকে উঠে দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বাইকের পিছনে বসে থাকা সুমনের মাথায় আঘাত করে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। সুমনের হাতে থাকা কয়েক লক্ষ টাকা-ভর্তি ব্যাগ দুষ্কৃতীরা নিয়ে পালায়। সুমন বলেন, ‘‘আমরা চিৎকার করে লোকজনকে ডাকার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এলাকাটা সুনসান। কেউ ছিল নমা আশপাশে। কেউ এগিয়েও আসেনি। সেই সুযোগে দুষ্কৃতীরা মোটর বাইক নিয়ে ধীরেসুস্থেই পালিয়ে যায়।’’
পরে সুমনবাবু হাবরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় বাউগাছি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। মাথায় ৫টি সেলাই পড়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, সুমনদের কাছে টাকা থাকবে, তা জানা ছিল দুষ্কৃতীদের। নির্জন হওয়ার জন্যই ওই এলাকা বেছে নিয়েছিল তারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবব্রতবাবু বেকারির ব্যবসা করেন। ভাইপোকে হাবরা শহরে নিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যবসারই কাজে। যদিও ঘটনার পরে দেবব্রতবাবুরা তাঁদের কাছে থাকা টাকার হিসেব নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলছেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। কখনও তাঁরা জানিয়েছেন, সঙ্গে ছিল ৭ লক্ষ টাকা। কিন্তু লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ছিনতাই হয়েছে আড়াই লক্ষ টাকা। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
হাবরা থানার আইসি দেবাশিস চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, হাবরার ব্যবসায়ীদের আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কোনও ব্যবসায়ী যদি ৫০ হাজার বা তার বেশি টাকা সঙ্গে নিয়ে যাতায়াত করেন, তা যেন আগেভাগে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। এক পুলিশ কর্তার বক্তব্য, ‘‘এ ক্ষেত্রে কোনও অজ্ঞাত কারণে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়নি। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে হাবরা শহরের গুরুত্ব ব্যবসায়ীদের কাছে দীর্ঘদিনের। জেলার নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন। কোটি টাকার লেনদেন হয় প্রতিদিন। শহরের নিরাপত্তা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু ক্যামেরা অনেক দিন হল অকেজো।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ভোটের আগে যখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো চতুর্দিকে, মোটর বাইক, গাড়ি তল্লাশিও চলছে, তখন এমন ঘটনা ঘটল কী ভাবে? ওই এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী কি আদৌ টহল দিয়েছে?
পুলিশের যুক্তি, জায়গাটি লোকালয়ের মধ্যে পড়ে না। তাই বাহিনী এখনও টহল দেয়নি।