কালীমন্দির ঘিরে দৃঢ় হল সম্প্রীতির ভিত

মুসলিম মিস্ত্রি বানালেন নকশা

মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম পাহাড়ি নামে এক ব্যক্তি মন্দিরের যাবতীয় নকশা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করেছেন। বাবু পাহাড়়ি নামে এক সংখ্যালঘু মানুষ মন্দিরে পাথর বসানোর কাজ করেছেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ০৩:০০
Share:

নব-রূপে: বহু মানুষের ভরসার জায়গা এই মন্দির। নিজস্ব চিত্র

একটি ভগ্নপ্রায় কালীমন্দির ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হল বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ এলাকায়। আর ওই কর্মকাণ্ডকে ঘিরে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির ভিত আরও দৃঢ় হল। মন্দির তৈরিতে এগিয়ে এসেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরাও। মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের মধ্যেও রয়েছেন সংখ্যালঘুরা। মন্দিরের নকশা তৈরি করেছেন এক স্থানীয় এক মুসলিম রাজমিস্ত্রি।

Advertisement

বনগাঁ-বাগদা সড়কের পাশে তৈরি হয়েছে ১০০ ফুট উঁচু মন্দিরটি। বনগাঁ শহরে এত বড় এবং সুদৃশ্য কালীমন্দির আর নেই। সোমবার নব কলেবরে মন্দিরের দ্বারোঘাটন করলেন প্রাক্তন পুরপ্রধান জ্যোৎস্না আঢ্য। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ইতিমধ্যেই মন্দির দেখতে ভিড় করছেন।

এলাকাটি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। স্থানীয় কাউন্সিলর তথা বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য মন্দিরটি তৈরি করতে উদ্যোগ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের ওয়ার্ডে বহু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। মন্দির তৈরির নকশা তৈরির দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় এক মুসলিম রাজমিস্ত্রিকে। মন্দির তৈরিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরাও সাহায্য করেছেন।’’

Advertisement

মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম পাহাড়ি নামে এক ব্যক্তি মন্দিরের যাবতীয় নকশা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করেছেন। বাবু পাহাড়়ি নামে এক সংখ্যালঘু মানুষ মন্দিরে পাথর বসানোর কাজ করেছেন।

মন্দিরটি তৈরি ১৯৪৯ সালে। সতীশ গজি নামে এক ব্যক্তির দানের জমিতে সেটি তৈরি হয়। প্রবীণ বাসিন্দা পরিতোষ দাস জানালেন, কুড়ি বছর ধরে মন্দিরটি ভগ্নপ্রায়। সিমেন্টের কালী মায়ের মূর্তিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এলাকার মানুষ শঙ্করবাবুর কাছে মন্দিরটি নতুন করে তৈরি করার আবেদন করেন।

মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন উপলক্ষে সোমবার বহু মানুষ নদিয়ার চাকদহ থেকে গঙ্গার জল নিয়ে এসে মন্দিরে থাকা শিবলিঙ্গে ঢেলেছেন। চাকদহে গিয়ে ওই কাজ তদারকি করেছেন রহমান মোল্লা, আয়াতুল্লা বিশ্বাসেরা। ভাল প্রয়াসের পাশে আছেন তাঁরা, জানালেন সংখ্যালঘুরা। আয়াতুল্লা বলেন, ‘‘আমাদের যখন জলসা হয়, হিন্দুরাও সহযোগিতা করেন। ইদের সময়েও সাহায্য পাই ওঁদের থেকে।’’

মন্দিরের পাশেই মাদ্রাসা। সেখানে ইদের নমাজ পড়া হয়। ফলে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে এলাকাটি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বহু বছর ধরেই এই এলাকার দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে থাকেন।

কিছু দিন আগে হিন্দু বোনের শেষকৃত্যে কাঠ সাজিয়ে খবরের শিরোনামে আসেন এক মুসলিম ভাই। সম্প্রতি বাদুড়িয়া-বসিরহাট কাণ্ডের পরে এমন ছবি দুই সম্পদায়ের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের ভিত আরও দৃঢ় করবে বলেই তাঁদের আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন