দিদির জন্য চিতার কাঠ সাজালেন মুসলিম ভাই

চিতার কাঠ সাজাচ্ছিলেন অশক্ত শরীরে। পরিশ্রান্ত হয়ে এক সময়ে শ্মশানের এক কোণে দাঁড়িয়ে চোখ মুছে নিলেন আশি ছুঁই ছুঁই ভাই। দিদিকে চিতায় তোলার মুহূর্তে এগিয়ে এলেন। ধরা গলায় বললেন, ‘‘দিদিকে যেন একেবারে বিবস্ত্র করে পোড়ানো না হয়।’’ তাঁর কথা মতোই কাজ হল।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ০২:২৪
Share:

শেষ-শ্রদ্ধা: আবদুল সাত্তার মণ্ডল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

চিতার কাঠ সাজাচ্ছিলেন অশক্ত শরীরে। পরিশ্রান্ত হয়ে এক সময়ে শ্মশানের এক কোণে দাঁড়িয়ে চোখ মুছে নিলেন আশি ছুঁই ছুঁই ভাই। দিদিকে চিতায় তোলার মুহূর্তে এগিয়ে এলেন। ধরা গলায় বললেন, ‘‘দিদিকে যেন একেবারে বিবস্ত্র করে পোড়ানো না হয়।’’ তাঁর কথা মতোই কাজ হল।

Advertisement

সোমবার সকালে মানময়ী সরকারের সৎকার পর্বে শোক সামলেও সকলের চোখ ছিল তাঁর ভাই আবদুল সাত্তার মণ্ডলের দিকে। ভিনধর্মী দিদির জন্য বৃদ্ধ ভাইয়ের আবেগের সাক্ষী থাকল বনগাঁ শ্মশান।

সাত্তার থাকেন বনগাঁ শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মগপাড়ায়। নব্বইয়ের মানময়ীদেবী থাকতেন পাশের জয়পুর এলাকায়। আবদুলের সঙ্গে বৃদ্ধার সম্পর্ক বহু বছরের। অর্ধশতক আগে মানময়ীদেবীরা ও পার বাংলা থেকে এসে জয়পুরে থাকতে শুরু করনে। সে সময় থেকেই দু’টি পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আবদুলরা দুই ভাই। কোনও বোন ছিল না। মানময়ীকে দেখে আবদুলের মা মুক্তিবিবি বলেছিলেন, ‘‘আমার তো কোনও মেয়ে নাই। তুমি যদি আমাকে মা ডাকো, তা হলে আমার আত্মা শান্তি পাবে।’’

Advertisement

তারপর থেকে মানময়ীর কাছে চিরদিন ওই ডাকই শুনে এসেছেন আবদুলের মা। সেই সূত্রেই আবদুল তাঁর ভাইজান। আবদুল নিজেও বাড়িতে জামাই ষষ্ঠীতে দিদি-জামাইবাবুকে নিমন্ত্রণ করে খাইয়েছেন বলে জানা গেল পারিবারিক সূত্রে।

বয়সজনিত কারণে সম্প্রতি রোগে ভুগছিলেন মানময়ীদেবী। শনিবার থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। আবদুল আসেন। দোতলার একটি ঘরে মানময়ীর মাথার কাছে গিয়ে বসেন। একদিকে আত্মীয়েরা যখন হরিনাম সংকীর্তন করেছেন, মাথার কাছে বসে আবদুল দিদির জন্য আল্লার কাছে দোয়া চেয়েছেন। রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মারা যান মানময়ী। সোমবার সকালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শ্মশানে। শেষযাত্রায় সকলের সঙ্গে হেঁটেছেন তাঁর ভাইও। অমিতবাবু বলেন, ‘‘ঠাকুরমার ভাইয়ের ইচ্ছার মর্যাদা দিতে পোড়ানোর আগে আমরা ঠাকুরমাকে বিবস্ত্র করিনি।’ অমিতবাবু আরও জানান, ঠাকুরমার শেষ সময়ে এলাকার বহু মুসলিম পরিবারের মহিলারা এসে ঠাকুরমার মুখে জল দিয়ে গিয়েছেন। মুসলিমদের শেষযাত্রায় তাঁরাও যান বলে জানান অমিত। এলাকার কাউন্সিলর, তথা বনগাঁর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘ওই এলাকায় বহু বছর ধরে হিন্দু মুসলিমের সহাবস্থান। বিপদে আপদে তাঁরা পরস্পরের পাশে দঁড়ান।’’ শোকস্তব্ধ আবদুলের কথায়, ‘‘ভাই হিসাবে দিদির জন্য শ্মশানে গিয়েছে, চিতার কাঠ সাজিয়েছে। এ আর এমনকী!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement