লাফ মেরে বাধা জয় রোজিনার

নিজে রাজ্য কাবাডি দলের নিয়মিত সদস্য। রাজ্য তো বটেই, খেলার সুবাদে রোজিনা চষে বেড়ান দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৯
Share:

কবাডি-কবাডি: খেলার একটি মুহূর্ত। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বাধা ছিল প্রতি পদে। কিন্তু সম্পূর্ণ একার চেষ্টায় বাধা টপকেছেন তরুণীটি। বসিরহাটের প্রত্যন্ত এলাকা দণ্ডিরহাটের আমতলা গ্রামের রোজিনা খাতুন। রোজিনা একার চেষ্টায় গড়ে ফেলেছেন একটি কাবাডির দল।

Advertisement

নিজের হাতে তৈরি করা সেই দলের সদস্যদের অনেককেই ধরে রাখতে পারেননি। বিয়ে হয়ে গিয়েছে অনেকের। কিন্তু, হতোদ্যম না হয়ে ফের শুরু করেছেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে এসেছেন নতুন নতুন খেলোয়াড়। সবাইকে যে ধরে রাখা যাবে না, তা-ও জানেন। রোজিনা বলেন, ‘‘ও সব নিয়ে আর ভাবি না। চেষ্টা করি সবাইকে ধরে রাখতে। কিন্তু না হলে আর কী করা যাবে! নতুন কেউ আসবে। আমি লড়ে যাব।’’

নিজে রাজ্য কাবাডি দলের নিয়মিত সদস্য। রাজ্য তো বটেই, খেলার সুবাদে রোজিনা চষে বেড়ান দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ এসেছে। কিন্তু, বাড়ির লোকেদের তিনি বোঝাতে পেরেছেন, কাবাডিই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। তিনি অবশ্য একা নন। প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে তানিয়া দত্ত, স্বপ্না দাস— এরকম আরও অনেকেই এখন তাঁর সাথী।

Advertisement

তবে শুরুটা সহজ ছিল না। স্কুলে পড়ার সময় আর পাঁচটা মেয়ে যেমন দৌড়-ঝাঁপ করত, তেমনই অ্যাথলেটিক্স দিয়েই শুরু রোজিনার খেলোয়াড় জীবন। তিনি বলেন, ‘‘সেই সময় কাবাডি দেখে ভাল লেগে যায়। ছেলেরা খেলত। আমিও তাদের দলে ভিড়ে খেলতে শুরু করি।’’ কিন্তু, মেয়ে হয়ে ছেলেদের সঙ্গে খেলবে? এ যেন দঙ্গল ছবির চিত্রনাট্য! ব্যস, সেখানেই ইতি।

সেখানেই সব শেষ হতে পারত। হতে দেননি রোজিনা নিজেই। খোঁজ নিয়ে মেয়েদের দলে ভিড়ে যান তিনি। কাছেপিঠে কোথাও মেয়েদের কোনও দল ছিল না। ফলে, তাঁকে যেতে হত অনেক দূরে, কাঁচরাপাড়ায়। সেখানে নিয়মিত প্র্যাকটিস। তারপর বাড়ি। লড়াই ছাড়েননি তিনি। লড়াইয়ের পুরস্কারও মেলে। প্রথমে জেলা, পরে রাজ্য দলে সুযোগ আসে।

এলাকায় ঘুরে ঘুরে মেয়েদের কাবাডির কোর্টে টেনে আনেন রোজিনা। তৈরি করেন টিম। বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে কাবাডির দল করার জন্য মেয়েদের বলতেনও। উচ্চমাধ্যমিকের পর নিজের লেখাপড়ায় ইতি। রোজিনা বলেন, ‘‘খেলব বলে আর পড়াশোনার দিকে যাইনি। আগে কাঁচরাপাড়ায় যেতে হত, পরে ১৫-২০ জন জুটে যায়। স্থানীয় বদরপুরে একটা ক্লাবের মাঠে এখন প্র্যাকটিস করি।’’বসিরহাটের একটি ক্লাবের ছেলে এবং মেয়েদের কাবাডি দল রয়েছে। সেই দলের নিয়মিত সদস্য তিনি। রবিবার জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত ব্লক ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় খেলতে ব্যারাকপুরে এসেছিলেন তিনি।

একটা সময় ভাল দল তৈরি হল। কিন্তু, মেয়েদের পদে পদে বাধা। পাড়া-প্রতিবেশীর সমালোচনা। রোজিনা বলেন, ‘‘অনেক কষ্টে বোঝাতাম। বাড়ির লোকেরা রাজি হত। পরে একদিন শুনতাম, কারওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে!’’

অসুবিধা এখনও যে হয় না, তা নয়। স্বপ্না-তানিয়ারা জানান, রোজিনা গিয়ে বোঝানোর পর বাড়ির লোকেরা রাজি হয়েছেন। রোজিনা এখন টিমের ক্যাপ্টেন। আক্ষরিক অর্থেই বড় দিদির মতো আগলে রাখেন মেয়েদের। দিদির কাছে তাঁরাও নিশ্চিন্ত। টিমের কোচ বাপ্পা বিশ্বাস বলছেন, ‘‘রোজিনাকে দেখে এখন অনেক মেয়েই কাবাডিতে আসছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন