যানজট মুক্ত শহর চাইছে বসিরহাটের তরুণ প্রজন্ম

ইছামতী নদীর ধারে গড়ে ওঠা বহু পুরনো শহর বসিরহাট। পুরসভায় মোট ২৩টি ওয়ার্ড। ভোটারের সংখ্যা ১,০৫,৯৫ জন। যার মধ্যে নতুন ভোটারের সংখ্যাটাও খুব কম নয়। যাঁদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হল শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ইটিন্ডা রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ বলে মনে করেন তাঁরা। বিকল্প রাস্তার অভাবে দুর্ঘটনা ঘটে। যানজট লেগেই থাকে। পুরনো নাগরিকদের কাছে যা অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গেলেও নতুন প্রজন্ম এই অব্যবস্থা মেনে নিতে নারাজ।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৬
Share:

বাঁদিক থেকে মেঘনা বন্দ্যোপাধ্যায়, সামন্তিকা হালদার, সুমিতকুমার দে, চন্দ্রাণী বসু, শৌভিক নাথ এবং পিঙ্কি চন্দ্র।

ইছামতী নদীর ধারে গড়ে ওঠা বহু পুরনো শহর বসিরহাট। পুরসভায় মোট ২৩টি ওয়ার্ড। ভোটারের সংখ্যা ১,০৫,৯৫ জন। যার মধ্যে নতুন ভোটারের সংখ্যাটাও খুব কম নয়।

Advertisement

যাঁদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হল শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ইটিন্ডা রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ বলে মনে করেন তাঁরা। বিকল্প রাস্তার অভাবে দুর্ঘটনা ঘটে। যানজট লেগেই থাকে। পুরনো নাগরিকদের কাছে যা অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গেলেও নতুন প্রজন্ম এই অব্যবস্থা মেনে নিতে নারাজ।

বারাসাত কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মেঘনা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের জামরুলতলা এলাকায় ইটিন্ডা রাস্তার ধারে। তিনি বলেন, ‘‘এই প্রথম দেশের নাগরিক পরিচয়ে ভোট দিতে পারব বলে খুব আনন্দ হচ্ছে। তবে যে-ই জিতুক না কেন, আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের পাশাপাশি শহর পরিষ্কার রাখতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ডাস্টবিন, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য মানুষকে সচেতন করতে ধারাবাহিক প্রচার চালাতে হবে। ইটিন্ডা রাস্তায় নিত্য যানজটের হাত থেকে মুক্তির ব্যবস্থা হোক।’’ তাঁর মতে, নতুন ছেলেয়েদের কাছে সময়ের দাম অনেক। গতিময় জীবনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নানা কাজে ছুটতে হয় তাঁদের। যানজটের সমস্যার সুরাহা করাটা পুরসভার প্রাথমিক কাজ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। মেঘনা বলেন, ‘‘এত দিন বাবা-মায়ের সঙ্গে লাইনে দাঁড়ানোর পরেও ভোট দিতে পারতাম না। কাকুরা হয় তো আঙুলে একটু কালি ছুঁইয়ে দিতেন। তাতেই খুশি হয়ে যেতাম। আর এ বার সত্যি সত্যি আমার মতামতেরও একটা মূল্য থাকবে বোর্ড গঠনে, ভাবতেই রোমাঞ্চ হচ্ছে।’’ কোন পোশাকে ভোট দিতে যাবে, তা-ও ভেবে রেখেছেন তরুণী ভোটারটি। জানালেন, নীল রঙের জিনসের সঙ্গে সাদা রঙের টপ পরবেন। চোখে থাকবে রোদ চশমা।

Advertisement

পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ধলতিথার ব্রাহ্মণপাড়ার বাসিন্দা সামন্তিকা হালদার। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম বার ভোট দেব বলে ভাল লাগছে। ভোট দেওয়ার পরে আঙুলে কালির চিহ্ন আমার বড় হওয়ার কথা মনে করিয়ে দেবে। আমি চাই, নিরাপদে ভোটপর্ব যেন শেষ হয়। যে-ই জিতুক এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়ে যেন গুরুত্ব দেন।

২১ নম্বর ওয়ার্ডের ধোপাপাড়ার বাসিন্দা সুমিতকুমার দে। লোকজনকে পরিচয়পত্র দেখিয়ে বলছেন নিজের বড় হয়ে ওঠার অনুভূতির কথা। মা বলেছেন, ছেলে প্রথম বার ভোট দিতে যাবে। তাই বাড়িতে বেশ উৎসব উৎসব আবহ। বিরিয়ানি রান্না হবে ওই দিন। সুমিত বলেন, ‘‘যে-ই জিতুক সেটা বড় বিষয় নয়, আমি চাই নির্বিঘ্নে ভোট হোক। জয়ী প্রার্থী ওয়ার্ডের মানুষের কথা ভেবে পানীয় জল, রাস্তা সংস্কারের ব্যবস্থা করুন। শহরকে যানজট মুক্ত করুন।’’

প্রথম বার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের কথা মনে রাখতে মায়ের হাতের মটন বিরিয়ানি এবং চিকেন চাপ খেয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে চান ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালীবাড়ি পাড়ার বাসিন্দা চন্দ্রাণী বসু দে। গণ্ডগোল যেন না হয় ভোটের দিন, মনে-প্রাণে চান তরুণী ভোটার। চন্দ্রানি জানাসেন, ইদানীং শহরে চুরি বেড়েছে। কয়েক দিন আগে তাঁদের এক প্রতিবেশীর বাড়িতে চোর ঢুকেছিল। বাড়িতে কেউ ছিলনা। চোরেরা ফ্রিজ খুলে মাংস নিয়ে ইনডাকশনে গরম করে খায়। পারফিউম মাখে। আলমারি খুলতে না পেরে ছোট খাটো কয়েকটা জিনিশ নিয়ে পালায়। এ সব বন্ধ হওয়া দরকার বলে মনে করেন চন্দ্রাণী। জয়ী প্রার্থী যেন মহিলাদের নিরাপত্তার দিকে নজর দেন, চান চন্দ্রাণী।

টাকি রাস্তায় দেখা হয়ে গেল ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের চৌমাথার বাসিন্দা শৌভিক নাথের সঙ্গে। বললেন, ‘‘কবে ভোট দিতে যাব, সে জন্য যেন আর তর সইছে না।’’

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পিঙ্কি চন্দ্র বলেন, ‘‘চিকেন খেতে ভালোবাসি তাই ভোটের দিনটা স্মরনীয় করে রাখতে মাকে বলেছি মাংস রাঁধতে।’’ পিঙ্কির কথায়, ‘‘জন প্রতিনিধিদের কাছে আমার একটাই দাবি, আপনারা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করুন। রাস্তা, আলো এবং মহিলাদের নিরাপত্তার কথা ভাবুন। যানজট মুক্ত করুন শহরকে।

পিঙ্কি বলেন, ‘‘আমি চাই গরিব মানুষের সমস্যা দূর করতে যেন তৎপর হন জয়ী প্রার্থীরা। বস্তি উন্নয়ন, পরিবেশের উন্নতি, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতিতে কাজ করেন। বসিরহাট শহরকে সুন্দর করে সাজানোর পাশাপাশি বেকার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন