মাছি তাড়াচ্ছেন ডাক্তারবাবুরাও

নোট বাতিলের গুঁতোয় ভিড় কমেছে চিকিৎসকদের চেম্বারে। কোথাও ধারবাকিতেই চলছে রোগী দেখা। উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চোখে পড়ল এই ছবি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৯
Share:

নোট বাতিলের গুঁতোয় ভিড় কমেছে চিকিৎসকদের চেম্বারে। কোথাও ধারবাকিতেই চলছে রোগী দেখা। উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চোখে পড়ল এই ছবি।

Advertisement

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা। ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের ল্যাবরেটরি থেকে গজগজ করতে করতে বেরোলেন মগরাহাটের জামাল মোল্লা। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করার পরে বললেন, ‘‘রক্ত পরীক্ষার খরচ ২৮৭ টাকা। ৫০০ টাকার নোট দিলে পুরো টাকাটাই জমা রেখে ল্যাবরেটরির এক কর্মী জানালেন, খুচরো ২৮৭ টাকা দিলে তবেই সেই টাকা ফেরত দেবেন। কারণ, ওদের কাছে খুচরো নেই।’’ বিষয়টি স্বীকার করে ল্যাবরেটরি কর্মীর দাবি, ‘‘সরকার আমাদের ৫০০-১০০০ নিতে বলেছে। আমরা নিচ্ছি। কিন্তু সকলকে খুচরো দেবো কী করে?’’

শুক্রবার সকাল ১১টা। বসিরহাট থানার সামনে এক শিশু বিশেষজ্ঞের চেম্বার। বাইরে বসে মাত্র দু’তিন জন অভিভাবক বসেছিলেন বাচ্চাদের নিয়ে। অথচ নোট বাতিলের ঘোষণার আগে সকাল বেলা ওই চেম্বারে রোগী এবং তাদের অভিভাবকদের ভিড় উপচে পড়ত। খুচরো সমস্যা মেটাতে দুই জেলার কিছু চেম্বারে ধারে রোগী দেখছেন চিকিৎসকেরা। সর্দি, কাশি, পেট ব্যথার মতো সমস্যায় যাঁরা চিকিৎসকের কাছে আসতেন, তাঁদের অনেকেই এখন স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে সমস্যার কথা বলে কাজ চালানোর মতো ওষুধপত্র নিয়ে নিচ্ছেন।

Advertisement

ডায়মন্ড হারবার শহরে চিকিৎসকদের চেম্বারের সংখ্যা আড়াইশোরও বেশি। রয়েছে ১৫-২০টি নার্সিংহোম। এখানে চিকিৎসকদের ভিজিট কমবেশি ১৫০-৩০০ টাকা। খুচরো নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন রোগী থেকে চিকিৎসক— সকলেই। চিকিৎসকদের ভিজিট হিসেবে অনেকেই ৫০০-১০০০ টাকার নোট ধরাচ্ছেন। কিন্তু প্রায় কোনও চিকিৎসকই সেই টাকা নিচ্ছেন না। অনেকেই পুরনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করে দিয়েছেন। ডায়মন্ড হারবারের জেলা হাসপাতালের ১ নম্বর গেটের সামনে একটি ওষুধের দোকানে একজন স্ত্রী রোগ এবং একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বসেন। ওই ওষুধের দোকানের মালিক অশোক রায় জানান, বেশির ভাগ রোগী ৫০০-১০০০ টাকার নোট দিচ্ছেন। খুচরোর সমস্যা মেটাতে চিকিৎসকের ভিজিটের সঙ্গে ওষুধের দাম কেটে নেওয়া হচ্ছে। তবে তাতেও সমস্যা পুরোপুরি মিটছে না। ডায়মন্ড হারবারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অর্ণব হাতি, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ বিনয় আদকেরা বলেন, ‘‘চিকিৎসা করার আগে খুচরো টাকায় ভিজিট দেওয়ার কথা রোগীদের জানিয়ে দিচ্ছি।’’

বসিরহাটের সোনপুকুর এলাকার বাসিন্দা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জগবন্ধু মণ্ডল বলেন, ‘‘নোট বাতিলের ঘোষণার আগে দিনে ৪০-৫০ জন রোগী আসতেন। এখন মাত্র ১০-১৫ জনের বেশি রোগী আসছেন না।’’ তিনি জানান, ধারবাকিতেও চিকিৎসা চলছে। বনগাঁ হাসপাতালের এক চিকিৎসক বাইরেও রোগী দেখেন। তাঁর দাবি, ‘‘নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে চেম্বারে রোগীর সংখ্যা অর্ধেক কমে গিয়েছে। কোনও কোনও রোগী ১০০ টাকার নোটে ভিজিট দিচ্ছেন। কেউ কেউ ধারে দেখে দেওয়ার অনুরোধ করছেন।’’

হাবরার বাসিন্দা তথা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সহকারী কোষাধ্যক্ষ চিকিৎসক দীপক কুণ্ডু বলেন, ‘‘৫০০-১০০০ টাকার নোট নেওয়া হচ্ছে না। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে কম টাকা নিচ্ছেন। ধার দিচ্ছেন।’’ কাকদ্বীপের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বিকে রায়ের কথায়, ‘‘রোগীর সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। যাঁরা আসছেন অনেকের কাছেই পুরনো নোট। আমি বলছি, প্রয়োজন হলে বাকিতে দেখান। পরে দেবেন। কিন্তু পুরনো নোট নিতে পারব না।’’

(তথ্য সহায়তা: নির্মল বসু, সীমান্ত মৈত্র, দিলীপ নস্কর, শান্তশ্রী মজুমদার)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন