অযত্নের ছাপ সর্বত্রই। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১২৩ তম জন্মদিবস পালন করল বনগাঁ, গোপালনগর ও বসিরহাট।
সোমবার সকালে বনগাঁ পুরসভার পক্ষ থেকে ত্রিকোণ পার্ক এলাকায় সাহিত্যিকের মূর্তিতে মাল্যদান করেন পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান জোৎস্না আঢ্য-সহ কাউন্সিলরেরা। সন্ধ্যায় নীলদর্পণ অডিটোরিয়ামে সাহিত্যিকের উপরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। তা ছাড়া, মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে বিভূতি শিশু উদ্যানে নীলপ্রবাহ সাংস্কৃতিক সংস্থা ও পশ্চিমবঙ্গ ইছামতী নদী সংস্কার সহায়তা কমিটির পক্ষ থেকে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাহিত্যিককে স্মরণ করা হয়।
বিভূতিভূষণের শ্বশুরবাড়ির গ্রাম বসিরহাটের পানিতরেও পালন করা হয় জন্মদিবস। সীমান্ত-লাগোয়া ওই গ্রামে ধ়নীরঘর চত্বরে বিভূতিবাবুর আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করেন বসিরহাট ডিস্ট্রিক্ট রিপোর্টারস ক্লাব এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মবার্ষিকী কমিটির সদস্য-সহ গ্রামের মানুষ।
যেখানে সারা শহর জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালন করা হচ্ছে কথা সাহিত্যিকের জন্মদিন, সেখানে তাঁর বাড়ি সংরক্ষণের দিকে কারও নজর নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির দেওয়ালে শ্যাওলা জমে গিয়েছে। লেখা রয়েছে নানা অশালীন শব্দ। ঘরের গ্রিল ও কাঠের দরজাগুলিতে তালা ঝুলছে। যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে রয়েছে।
বনগাঁ মহকুমার গোপালনগরের শ্রীপল্লি ব্যারাকপুর গ্রামের এই বাড়িটিতেই জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন সাহিত্যিক। এখানে বসেই তিনি লিখেছিলেন ‘ইছামতী’, ‘অভিযাত্রী’। শোনা যায়, এখান থেকে রোজ হেঁটে স্নান করতে যেতেন ইছামতী নদীতে। এই বাড়ি থেকেই তিনি গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশনে শিক্ষকতা করতেন। বাড়িতে বসতেন একটি কাঠের চেয়ারে। সেটি অবশ্য এখনও আছে। তবে সব কিছুই বড় অযত্নে।
এ দিন বিভূতিভূষণের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সাহিত্যিকের আবক্ষ মূর্তিতে একটি মালা ঝুলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, আগাছা সদ্য পরিষ্কার করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বছরের বেশির ভাগ সময়ে বাড়িটি আগাছায় ভরে থাকে। বিষাক্ত সাপেদের আনাগোনা রয়েছে। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করা হোক কথা সাহিত্যিকের এই ভিটে। একটি সংগ্রহশালা তৈরি হোক। রোজই দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে বাড়িটি দেখতে আসেন। কিন্তু বাড়ির হতশ্রী অবস্থায় তাঁরা হতাশই হন।
সোমবার ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার। তাঁর কথায়, ‘‘রাতে এই বাড়িতে এলে ভূতের ভয় করবে। দ্রুত বাড়িটি সংস্কার করা প্রয়োজন।’’ পাশের বাড়িতে থাকেন কবি সমরেশ মুখোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘‘উনি যখন বেঁচেছিলেন, তখন বাড়িটি ছিল টালি ও মাটির। আমরা চাই সরকার বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণা করে পুরনো আদলে ফিরিয়ে আনুক।’’
কিছু দিন আগে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জরাজীর্ণ বাড়িটির সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি বলে জানান বাসিন্দারা। বাড়িতে বিভূতিভূষণ ও তাঁর স্ত্রী রমা (কল্যাণী) বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। স্থানীয় এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘বাড়িটি আমাদের গর্ব। কিন্তু এমন অনাদর দেখে চোখে জল এসে যায়।’’
বাড়িটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করা এবং একটি সংগ্রহশালা তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে দাবি করলেন স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। এমনকী, এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনাও সরকারের আছে বলে জানিয়েছেন।