জামিনের টাকা জমা দিতে না পারায় ঘুচছে না বন্দিদশা

খুচরোর অভাবে বাকিতে রোগী দেখছেন চিকিৎসকেরা। খাতায় লিখে বা টাকা বাকি রেখে মামলা লড়তে বাধ্য হচ্ছেন আইনজীবীরা। তা সত্ত্বেও আদালত এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে মানুষের হাজিরা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাওয়ায় চিন্তিত চিকিৎসক-আইনজীবীদের একটা বড় অংশ।

Advertisement

নির্মল বসু ও সীমান্ত মৈত্র

বসিরহাট ও বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪২
Share:

সুনসান বসিরহাট আদালত চত্বর। নিজস্ব চিত্র।

খুচরোর অভাবে বাকিতে রোগী দেখছেন চিকিৎসকেরা। খাতায় লিখে বা টাকা বাকি রেখে মামলা লড়তে বাধ্য হচ্ছেন আইনজীবীরা। তা সত্ত্বেও আদালত এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে মানুষের হাজিরা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাওয়ায় চিন্তিত চিকিৎসক-আইনজীবীদের একটা বড় অংশ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার দুপুরে বসিরহাট আদালত চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, অন্য দিনের তুলনায় ভিড় বেশ কম। খদ্দেরের অভাবে খাঁ খাঁ করছে আদালত-সংলগ্ন দোকানপাট। আদালত চত্বরেই দেখা হল বসিরহাট দেওয়ানি আদালত বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক অমিত মজুমদারের সঙ্গে। বললেন, ‘‘খুচরো টাকার অভাবে এই ক’দিনে ৬০ শতাংশ মক্কেল কমে গিয়েছে। বিচারপ্রার্থীরা অসুবিধায় পড়েছেন। খুচরোর অভাবে কোর্ট ফি জমা দেওয়া স্ট্যাম্প কেনা-সহ নানা অসুবিধা দেখা দিয়েছে। আদালতের অন্যান্য খরচ মেটানো, এমনকী যে সব মামলা করতে হলে আদালতে টাকা জমা রাখতে হয়, সেই সব মামলাও করা যাচ্ছে না।’’

অমিতবাবুর দাবি, এ দিন তাঁর ১২টি জরুরি মামলায় বিচারপ্রার্থীদের আদালতে হাজির থাকার কথা ছিল। অথচ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে না পারায় মাত্র ৫টি মামলার বিচারপ্রার্থীরা হাজির হতে পেরেছেন। তা-ও আবার টাকা বাকি রেখেই মামলা লড়তে হয়েছে!

Advertisement

বসিরহাট ফৌজদারি আদালত বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত রায় বলেন, ‘‘টাকার অভাবে মহিলাদের খোরপোষের মামলায় আদায় হচ্ছে না। বাংলাদেশি বন্দি বা অন্যান্য আসামিদের জরিমানার টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। অন্যান্য মামলায় টাকার অভাবে জামিনদারেরা বন্ড দিতে পারছেন না।’’

এ দিন ১৪টি মামলায় লড়ার কথা ছিল বিশ্বজিতবাবুর। সেখানে মাত্র ২টি মামলার বিচারপ্রার্থীরা আসতে পেরেছেন বলে জানালেন তিনি। ওই আইনজীবীর দাবি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস কিংবা এটিএম থেকে টাকা তুলতে না পারায় বিচারপ্রার্থীরা আসতে পারছেন না। দু’চারজন যাঁরা ৫০০-১০০০ টাকার নোট নিয়ে আসছেন, তাদের বকেয়া খাতায় লিখে রেখে পেশার খাতিরে মামলা লড়তেই হচ্ছে।

সমস্যায় পড়েছেন বনগাঁর আইনজীবীরাও। মহকুমা আদালতের আইনজীবী অমরেশনারায়ণ শূর বলেন, ‘‘মক্কেল তো কমেইছে। মামলা ছেড়ে দিতে হচ্ছে ৫০০-১০০০ টাকার নোটের সমস্যায়।’’

আইনজীবীদের অনেকের বক্তব্য, পুরনো মক্কেল হলে ধার-বাকিতে কাজ করা যায়। কিন্তু নতুন মক্কেল এলে আইনজীবীর ফি শুনে যদি বলেন, ৫০০০-১০০০ টাকায় পারিশ্রমিক মেটাবেন, তা হলে খুব মুশকিল। হয় চোখ বুজে ভরসা করতে হয়। না হলে মামলা ছেড়ে দিতে হয়। অনেকে বাধ্য হয়ে ৫০০-১০০০ টাকার নোট নিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানালেন আইনজীবী অসীম দে।

বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তথা বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুখ্য ভারপ্রাপ্ত সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, ‘‘আদালতের সরকারি কোষাগারে পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোট জমা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে বিচারকেরা অভিযুক্তদের আর্থিক জরিমানা করলেও তারা টাকা জমা দিতে পারছে না। সে কারণে অনেকের জামিন হয়ে গেলেও বন্দি থাকতে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন