বসিরহাট পুরসভা

শপথ গ্রহণ নিয়ে টালবাহানা

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কালো পোশাকে হাজির হলেন বসিরহাট পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা। গণতন্ত্রের নামে দুষ্কৃতীদের দিয়ে ভোট লুঠ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে, তেমনই বাছা বাছা স্লোগান দিতে দিতে সোমবার বসিরহাট পুরসভায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির হন তাঁরা। অন্য কিছু পুরসভার মতোই এখানেও বামেরা অনুষ্ঠান বয়কট করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০০:১৭
Share:

নব নির্বাচিত পুরপ্রধান তপনকুমার সরকার।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কালো পোশাকে হাজির হলেন বসিরহাট পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা। গণতন্ত্রের নামে দুষ্কৃতীদের দিয়ে ভোট লুঠ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে, তেমনই বাছা বাছা স্লোগান দিতে দিতে সোমবার বসিরহাট পুরসভায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির হন তাঁরা। অন্য কিছু পুরসভার মতোই এখানেও বামেরা অনুষ্ঠান বয়কট করেছে। বিজেপি কাউন্সিলরেরা শপথ নিলেও পুরপ্রধান নির্বাচন প্রক্রিয়া বয়কট করে। তৃণমূলের তরফে তপনকুমার সরকার (তপুদা) পুরপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন।

Advertisement

বসিরহাট পুরসভার ভোটে ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ১৩টি আসনে জয়ী হয়েছে। কংগ্রেস পেয়েছে ৫টি আসন। বিজেপি ৩টি এবং বামেরা ২টি আসনে জয়ী হয়েছে। ভোটের দিনে বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় গুলি-বোমা ছুড়ে সন্ত্রাস করে দুষ্কৃতীরা ভোট লুঠ করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। ৫টি বুথে ফের নির্বাচন হয়।

সোমবার মহকুমা প্রশাসনের তরফ থেকে ২৩ জন কাউন্সিলরকে শপথ গ্রহণের জন্য বেলা ১১টার মধ্যে পুরভবনে হাজির থাকার জন্য লিখিত ভাবে বলা হয়েছিল। বামফ্রন্টের পক্ষে কেউ না এলেও বিজেপির তিন জন নির্দিষ্ট সময়েই পৌঁছে যান।

Advertisement

তবে কংগ্রেসের ভূমিকায় কৌতুহল তৈরি হয় শহরবাসীর। দলের জয়ী কাউন্সিলর অসিত মজুমদারের নেতৃত্বে পাঁচ কাউন্সিলর কালো পোশাক পরে বিবেকানন্দ মূর্তির সামনে থেকে মিছিল করে পুরভবনে আসেন। অসিতবাবু বলেন, ‘‘গুলি-বোমা ছুড়ে মানুষকে ভোটদানে বিরত করে ভোট লুঠ করেছে তৃণমূলের লোকজন। সে সবেরই বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এ ভাবে মিছিল করা হয়েছে।’’

নাটকের তখনও আরও বাকি। কংগ্রেস যখন মিছিল করছে, সে সময়ে কিছু দূরে বসিরহাটের রবীন্দ্রভবনে বিশাল জনসমাবেশে তৃণমূল কাউন্সিলরেরা একত্রিত হয়েছেন। কিন্তু শপথ গ্রহণ তো পুরভবনে হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন? তৃণমূল কাউন্সিলরদের বক্তব্য, দলীয় ভাবে বড় কোনও সভাগৃহে জনগণের সামনে শপথ নেওয়ার জন্য আগে থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল মহকুমাশাসকের কাছে। সেই মতো তাঁরা রবীন্দ্রভবনে জমায়েত হয়েছেন।

কালো পোশাক পরে প্রতিবাদী কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা।

এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা আবার দাবি করেন, পুর ভবনের অনুষ্ঠানে তৃণমূল যে অনুপস্থিত, সে কথা লিখিত ভাবে না জানানো পর্যন্ত তাঁরা শপথ নেবেন না।

মহকুমা প্রশাসনের তরফে অভিজিৎ ঘোষ নামে এক জন ম্যাজিস্ট্রেট এ দিন হাজির ছিলেন পুরভবনে। তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কী করা উচিত। বারে বারে চেয়ার ছেড়ে উঠে ফোনে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। ইতিমধ্যে কংগ্রেস দাবি করে বসে, তৃণমূলকে বাদ রেখে শপথ নেওয়া হলে তাঁদের তরফে অসিত মজুমদার পুরপ্রধান হবেন। উপ পুরপ্রধান হবেন বিজেপির প্রদীপ রায়।

পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নেয়। অভিজিৎবাবু শেষমেশ জানিয়ে দেন, কোন দল কোথায় শপথ নেবে, তা কোনও আইনে বলা নেই। ফলে রবীন্দ্রভবনে কেউ শপথ নিতেই পারেন। তবে শপথ নেওয়ার পরে প্রথম সভার সভাপতি গঠন এবং পুরপ্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সকলকে পুরসভাতেই আসতে হবে।’’

কিন্তু সে কথা মানতে রাজি হননি কংগ্রেস এবং বিজেপি কাউন্সিলরেরা। বেগতিক বুঝে ‘একটু আসছি’ বলে ম্যাজিস্ট্রেট সোজা চলে যান কয়েকশো গজ দূরের রবীন্দ্রভবনে। সেখানে তৃণমূলের ১৩ জনকে শপথবাক্য পাঠ করানোর পরে তিনি ফিরে যান পুরসভায়। তৃণমূল কাউন্সিলরেরাও রবীন্দ্রভবন ছেড়ে পুরভবনের দিকে এগোন। এরপরে ম্যাজিস্টেস্ট্রের উপস্থিতিতে কংগ্রেস এবং বিজেপি কাউন্সিলরেরা এক সঙ্গে শপথবাক্য পাঠ করেন। তত ক্ষণে সেখানে পৌঁছেছেন তৃণমূল কাউন্সিলরেরা। তা দেখে কংগ্রেস এবং বিজেপি সভাগৃহ ছেড়ে স্লোগান দিতে দিতে উঠে পড়েন। বাহিনী নিয়ে পুরভবনে হাজির হন আইসি গৌতম মিত্র। পরে সভাপতি নির্বাচন করে পুরপ্রধান হন তপনবাবু। রবীন্দ্রভবনে এসে তিনি পুরপ্রধান হিসাবে শপথ বাক্য পাঠ করেন।

ছবি: নির্মল বসু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন