Stone Mine

‘পাথরই যদি ভাঙতে হয়, এত দূর পড়াশোনা করে কী লাভ হল’

কলেজের পঞ্চম সিমেস্টারের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্র শুভম দাস সন্দেশখালি ১ ব্লকের কালীনগরের বাসিন্দা। বাবা চাষবাস করেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২২ ০৭:১৮
Share:

সুব্রত রপ্তান। — নিজস্ব চিত্র।

টাকি গভর্নমেন্ট কলেজের স্নাতক সুব্রত রপ্তানের পাথর খাদানে শ্রমিকের কাজে গিয়ে মৃত্যুর খবরে মর্মাহত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কলেজে পড়াশোনা শেষ করে কোনও কাজের সুযোগ না পেয়ে সুব্রতকে যে ভাবে পাথর খাদানে শ্রমিকের কাজ বেছে নিতে হয়েছিল, তা ভাবাচ্ছে এই কলেজের নিম্নবিত্ত পরিবারের বর্তমান পড়ুয়াদেরও। তাঁরাও অনেকে চিন্তিত, আসন্ন কর্মজীবন নিয়ে।

Advertisement

কলেজের পঞ্চম সিমেস্টারের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্র শুভম দাস সন্দেশখালি ১ ব্লকের কালীনগরের বাসিন্দা। বাবা চাষবাস করেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। শুভম উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। জানালেন, সুব্রতের মৃত্যুর খবর শুনে খারাপ লাগছে তো বটেই, সেই সঙ্গে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত। শুভমে কথায়, ‘‘আমাকেও এবার কলেজের পড়া শেষ করে দ্রুত কোনও কাজে ঢুকতে হবে। পরিবারের যা আর্থিক অবস্থা, উচ্চশিক্ষার চেষ্টা করা সম্ভব নয়। শিক্ষকতা করার ইচ্ছে থাকলেও বিএড করার টাকা জোগাড় করা কঠিন। কবে এসএসসি পরীক্ষা চালু হবে, তা-ও চিন্তার বিষয়। চাকরি-বাকরির যা বাজার, অন্য সরকারি চাকরি পাব বলেও ভরসা করতে পারছি না!’’

উদ্ভিদবিদ্যার পঞ্চম সিমেস্টারের ছাত্র, হাসনাবাদ ব্লকের চকপাটলি গ্রামের বাসিন্দা শাহিদি হাসানের বাবাও ছোট চাষি। শাহিদির কথায়, ‘‘কলেজ পাস করেই দ্রুত কাজের চেষ্টা করতে হবে। সরকারি চাকরিতে যা প্রতিযোগিতা, ভরসা পাচ্ছি না। ১-২ বছর চেষ্টা করব সরকারি চাকরির। না হলে কোনও ছোটখাট সংস্থায় কাজ খুঁজব। তা-ও যদি না পাই, বাবার সঙ্গে মাঠে নেমে পড়ব। কিছু টিউশনও খুঁজব ভাবছি।’’ যদি পাথরই ভাঙতে হয়, এত দূর পড়ে কী লাভ হল— প্রশ্ন শাহিদির।

Advertisement

এই কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় সিমেস্টারের ছাত্র রাহুল ঘোষ উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। বাড়ি মাটিয়া থানার গাঙআঁটি গ্রামে। বাবা গোয়ালা। নিম্নবিত্ত পরিবার। রাহুল বলেন, “কলেজের পরে যদি কাজ খোঁজার চাপ না আসে, তা হলে এমএসসি করে গবেষণার দিকে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। না হলে বাবার ছোট্ট ব্যবসাটাই সামলাতে হবে।”

টাকি কলেজের ইংরেজি বিভাগের পঞ্চম সিমেস্টারের ছাত্র রতন মণ্ডল উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা রতনের বাবা শ্রমিকের কাজ করেন। রতন বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম বিএড করব। তারপর মনে হল, এসএসসি জটিলতার কথা। সব মিলিয়ে একটু বিচলিত হই। সিভিল সার্ভিসের কথাও যে ভাবিনি তা নয়। কিন্তু সেটা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অত দিন বাবা আর টানতে পারবেন কি না জানি না। শেষ পর্যন্ত কী যে হবে!’’

কলেজ-পাস সুব্রত রপ্তানের পরিণতি খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন এই পড়ুয়ারা। কর্মজীবন নিয়ে চিন্তিত হিঙ্গলগঞ্জ কলেজের বাংলা বিভাগের পঞ্চম সিমেস্টারের ছাত্র শুভজিৎ মণ্ডলও। জানালেন, এত দূর পড়াশোনা করে অর্থকরী কোনও কাজ করতে চান। কিন্তু শ্রমিকের কাজই যদি করতে হয়, তা হলে এত দূর পড়াশোনা করে কী লাভ হল— প্রশ্ন তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন