ছোট ছেলের বাড়ি গেলেন বৃদ্ধা অবলা

ছোট বৌমার হাত ধরে সাত দিন পরে হাসপাতাল থেকে ঘরে ফিরলেন অবলাদেবী। এই সাতটা দিন পুলিশ, চিকিৎসক আর স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবা মুগ্ধ করেছে নবোতিপর অবলাদেবীকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪০
Share:

বাড়ি নিয়ে যাওয়ার আগে...। ছবি: নির্মল বসু।

ছোট বৌমার হাত ধরে সাত দিন পরে হাসপাতাল থেকে ঘরে ফিরলেন অবলাদেবী।

Advertisement

এই সাতটা দিন পুলিশ, চিকিৎসক আর স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবা মুগ্ধ করেছে নবোতিপর অবলাদেবীকে। মঙ্গলবার বিকেলে অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠার মুখে চোখ দু’টো ছল ছল করে উঠল। বললেন, ‘‘এক ছেলে-বৌমা আমাকে বনগাঁর আরামডাঙা থেকে ভাড়া করা লোক দিয়ে বসিরহাটের মার্টিনবার্ন রোডে এক মেয়ের বাড়ির সামনে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেল। যখন ওই মেয়ে কিংবা নাতবৌ কেউই ঘরে তুলল না, তখন সেখানকার মানুষ আর পুলিশের চেষ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হলাম।’’ ইতিমধ্যে সাংসদ ইদ্রিশ আলি চিকিৎসা এবং পথ্যের জন্য হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছেন বৃদ্ধাকে। সে কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি অবলাদেবী। বলেন, ‘‘যে ক’টা দিন বাঁচব, বসিরহাটের মানুষের ব্যবহার ভূলতে পারব না।’’

ছেলেদের হাতে হেনস্থা বৃদ্ধার ঘরছাড়া হওয়ার খবর সংবাদপত্রে দেখে বাকি সন্তানেরা হাসপাতালে আসেন। ততক্ষণে অবশ্য মাকে ফেলে যাওয়ার জন্য দুই সন্তানের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। মায়ের সঙ্গে এমন ব্যবহারের জন্য লজ্জিত বলে মন্তব্য করেন ছেলেরা। ছোট ছেলে জয়গোপাল আচার্য বলেন, ‘‘মায়ের সঙ্গে দাদা-বৌদি যে এমন ব্যবহার করবেন, তা ভাবতে পারিনি। বসিরহাটে মেজদি ছায়া বন্দ্যোপাধ্যায়েরও উচিত ছিল, মাকে ঘরে নিয়ে যাওয়া। তবে আমরা মায়ের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছি। তিনি যত দিন বাঁচবেন, সাধ্যমতো আমিই তাঁর দেখাশোনা করব।’’

Advertisement

অবলাদেবীকে হাসপাতালে দেখতে এসে আবেগবিহ্বল হয়ে পড়়েন বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ। তিনি বলে যান, ‘মায়ের মতো’ অবলাদেবী চাইলে তাঁর বাড়িতেও থেকে যেতে পারেন। অবলাদেবী তাঁকে আশীর্বাদ করে বলেন, ‘‘বাবা, তোমার মতো যদি আমার বড়ছেলে, বৌমা কিংবা মেয়েরা হতো, তা হলে আর এই বয়সে এমন বিপত্তিতে পড়তামম না।’’ তবে বৃদ্ধা বারবারই বলে গিয়েছেন, বসিরহাটের মানুষের ব্যবহারে তিনি অভিভূত। সন্তানদের লাঞ্ছনা অনেকটাই ভূলতে পেরেছেন যে জন্য।

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক ভাবে আইনি সমস্যা মিটিয়ে ছোট বৌমা পূর্ণিমা আচার্য অবলাদেবীকে তাঁর বনগাঁর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদালত, এসডিপিও-র দফতর হয়ে থানায় আসেন। সেখানে আইসি-র সামনে লিখিত ভাবে জানান, শাশুড়ির সমস্ত দায়িত্ব নেবেন। কোনও অযত্ন হবে না, লিখিত ভাবে সেই প্রতিশ্রুতি দেন। পরে পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবলাদেবীকে নতুন কাপড় পরিয়ে কোলে করে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়। পুলিশ-প্রশাসনের ব্যবহারে তখন বৃদ্ধার দু’চোখ ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। দু’হাত তুলে কী যেন বলতে চাইছিলেন। তারই মাঝে গাড়ি ছেড়ে দেয়। ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় দূরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement