নৌ বাহিনীর পোশাক পরে নকল অফিসার সেজে আর্থিক প্রতারণা চক্রের এক পান্ডাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার রাতে গোপালনগর থানার পুলিশ বলিয়ানপুর থেকে ধরে কিশোর ভৌমিক নামে স্থানীয় ওই ব্যক্তিকে। সোমবার ধৃতকে বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
২ জানুয়ারি ওই চক্রের দুই সদস্য সুব্রত বিশ্বাস ও দীপঙ্কর ঘোষকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তাদের জেরা করে পুলিশ চক্রের পান্ডার হদিস পায়। এত দিন সে পলাতক ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারণা চক্রটি ‘অল ইন্ডিয়া রিক্রুটমেন্ট অব বেসিক মেরিন নলেজ কোর্স ফর কোস্টাল সার্ভিস’ নামে একটি সংস্থা খুলে বসেছিল। তাদের অফিস গোপালনগরে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই সংস্থার নামের সঙ্গে দেশের একটি নামী সংস্থার নামের অনেকটা মিল রয়েছে। চক্রের সদস্যেরা সেই সুযোগ নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করত।
মাস তিনেক আগে সংস্থাটির তরফে খবরের কাগজে ও নিজেদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বলা হয়, কোস্টাল সার্ভিসের বিভিন্ন পদে (নাবিক, চিফ কুক) চাকরি দেওয়া হবে। গোটা দেশে শূন্যপদ ২৩ হাজার ৪০টি। যাঁদের বাছাই করা হবে, তাঁদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করবে সংস্থা।
চাকরির আশায় রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে যুবকেরা চাকরির জন্য অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করে। পুলিশ জানিয়েছে, আবেদন করার সময়ে ওই সংস্থার অ্যাকাউন্টে ১০০ টাকা জমা করতে হয়েছে আবেদনকারীদের। পরে যাঁদের বাছা হয়েছিল, তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৭ হাজার ৮০ টাকা করে নেওয়া হয়। চক্রের সদস্যেরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার ১৫ জন যুবককে চাকরির নিয়োগপত্রও লেটার পাঠিয়েছিল। তাঁদের সম্প্রতি গোপালনগরের অফিসে আসতে বলা হয়। সেই মতো ওই যুবকেরা গোপালনগরে আসেন। তাঁরা দেখেন, ভারতীয় নৌ বাহিনীর পোশাক পরা লোকজন কাজ করছেন। সকলে ওই যুবকদের সংস্থার কর্মী হিসেবেই পরিচয় দিয়েছিল।
আবরার আলি জৌহর নামে নৈহাটির এক প্রতারিত যুবক থানায় দায়ের করা অভিযোগে জানিয়েছেন, সংস্থার লোকজনের নৌ বাহিনীর পোশাক পরা দেখে প্রথমে কোনও সন্দেহ হয়নি। পরে ডাক্তারি পরীক্ষা, নথিপত্র ভেরিফিকেশন ও ট্রেনিংয়ের জন্য আরও টাকা চাইলে সন্দেহ হয়। পুলিশকে খবর দেন। আবরার বলেন, ‘‘সংস্থার লোকজন আমাদের জানায়, গোপালনগরে আমাকে কয়েক দিন থাকতে হবে। সে জন্য প্রতিদিন আমাকে আরও চারশো টাকা করে দিতে হবে।’’
মালদার যুবক অমর্ত্য সরকারও ওই সংস্থায় টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছিল, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট দেখে চাকরিতে নেওয়া হবে। আমার মাধ্যমিকে ৮২ শতাংশ নম্বর ছিল। তাই আবেদন করেছিলাম। প্রথমে ১০৬ টাকা ও পরে ৭ হাজার ৮০ টাকা ওদের দিতে হয়েছিল। গোপালনগরে আসার পরে ওরা জানায়, মুম্বাইয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠাবে। সে জন্য ১ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়।’’
ওই যুবকেরা জানিয়েছেন, সংস্থার লোকজন কাগজে লিখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, কারও কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া হয়নি। তাতে সন্দেহ আরও গাঢ় হয়।