খোলা জায়গায় চলছে শৌচকর্ম

সম্প্রতি বাসন্তী ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় মানুষকে নানা ভাবে সচেতন করছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

Advertisement

সামসুল হুদা

বাসন্তী শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৯
Share:

কড়া-নজর: খোলামাঠে নয়। নিজস্ব চিত্র

ভোরের আলো সবে ফুটেছে। বিড়িতে সুখটান দিতে দিতে নদীর চরে শৌচকর্ম করতে বসেছিলেন এক ব্যক্তি। হঠাৎ বাঁশির শব্দ আর টর্চের আলো পড়ে আমেজ ভাঙল। দূর থেকে আওয়াজ শুনতে পেলেন, ‘‘দাদা খোলা জায়গায় বাথরুম করবেন না। রোগ-জীবাণু ছড়ায়।’’ লজ্জা ঢাকতে ঢাকতে বিরক্ত সুরে ওই ব্যক্তি বলে উঠলেন, ‘‘এ আবার কী উটকো ঝামেলা। বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে তো নদীর চরেই করে আসছি। কেউ তো কিছু বলেনি।’’ একদল যুবক এগিয়ে এসে বোঝাল, ‘‘আগে যা করেছেন, সবই যে ঠিক, তা কে বলে দিল? খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করলে তাতে মাছি বসে। সেই মাছি গিয়ে আবার খাবারে বসে। এ ভাবে রোগ ছড়ায়।’’

Advertisement

সম্প্রতি বাসন্তী ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় মানুষকে নানা ভাবে সচেতন করছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ২৯ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের এক প্রশিক্ষণ শিবিরেরও আয়োজন করেছিল তারা। ট্রেনিং শেষে তৈরি করা হয় নজরদারি টিম। বাসন্তী ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় যারা ভোরের দিকে অভিযান চালাচ্ছে। কেউ ফাঁকা জায়গায় শৌচকর্ম করছে কিনা, রান্নাঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে কিনা, বাড়ির আশেপাশে নোংরা আবর্জনা ফেলছে কিনা— এ সবের দিকে তাদের কড়া নজর। গ্রামের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করে সকলকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে।

সংস্থার কর্মীরা গত কয়েক দিনে বাসন্তীর জ্যোতিষপুর, বাসন্তী, ভরতগড়, রামচন্দ্রখালি, মসজিদবাটি পঞ্চায়েত এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। সংস্থার দাবি, প্রায় ২০০ পরিবারে শৌচালয় না থাকায় তারা মাঠেঘাটে, নদীর চরে শৌচকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

‘নির্মল জেলা’ হিসাবে আগেই ঘোষণা করা হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে। তারপরেও এই পরিস্থিতি।

জ্যোতিষপুরের নমিতা সর্দার, কেনারাম মণ্ডলরা বলেন, ‘‘আগে কেউ আমাদের এ নিয়ে কিছু বলেনি। কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধাও পাইনি যে বাড়িতে শৌচালয় বানিয়ে নেব।’’

নজরদারি টিমের সমীক্ষা বলছে, কেন বাড়িতে শৌচাগার কেন বানাননি? উত্তর মিলছে, টাকার অভাব। অথচ দেখা যাচ্ছে, বাড়িতে টিভি, মোবাইল, আসবাবপত্র দিব্যি আছে। যত কার্পণ্য বাড়িতে শৌচাগার বানানোর সময়ে। এঁদের বোঝানো হচ্ছে, অন্য খরচ একটু কমিয়ে অল্প টাকাতেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার বানানো যায়।

সংস্থার সদস্য সন্দীপ ভৌমিক বলেন, ‘‘পরিবেশ রক্ষা করতে ও মানুষকে সচেতন করতে এই কর্মসূচি। নির্মল বাংলা ও স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে ও তার সুযোগ-সুবিধা মানুষ যাতে পায়, সে জন্যই এই নজরদারি।’’

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে উঠোন-পিছু শৌচালয় তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। তারও আগে সরকারি ভাবে যাদের স্ল্যাব বসিয়ে শৌচাগার করে দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনেকে এখন সে সব ভেঙে ফেলছে নির্মল বাংলা বা স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে শৌচাগারের জন্য। সাধারণত কেউ যদি একবার সরকারি প্রকল্পে শৌচাগার পেয়ে থাকে, তা হলে তারা আর নতুন করে এই প্রকল্পের সুযোগ পাবে না। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, সরকারি ভাবে নির্মল ব্লক ঘোষণা করার আগে ব্লক, মহকুমা, জেলা ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নজরদারি কমিটি সব কিছু খতিয়ে দেখেছিল। বাসন্তী ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই সংস্থা এখনও আমাদের কিছু জানায়নি। ওঁরা রিপোর্ট দিলে খতিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন