বকেয়া ২৮ কোটি, গ্রামে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন কর্মীরা

যদিও পরিস্থিতি দেখে বসিরহাটের অনেক অফিসারকেও বলতে শোনা গেল, ‘‘এই যেখানে অবস্থা, সেখানে কার ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে, বকেয়া বিল চাইতে গ্রামে ঢুকবে কিংবা জরিমানা করবে?’’

Advertisement

নির্মল বসু 

হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩০
Share:

ভাঙচুর হল বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অফিস, মার খেলেন কর্মীরা, আঙুল তুলে শাসিয়ে গেল গ্রামের কিছু লোক— বুধবার হাসনাবাদের মুরারিশা চৌমাথায় ওই কাণ্ডের পরে বৃহস্পতিবার সন্ধে পর্যন্ত থানায় কোনও অভিযোগই দায়ের হল না দফতরের পক্ষ থেকে। সব দিক খতিয়ে দেখে অভিযোগ দায়ের করার কথা চলছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার বসিরহাট ডিভিশনের এক কর্তা।

Advertisement

যদিও পরিস্থিতি দেখে বসিরহাটের অনেক অফিসারকেও বলতে শোনা গেল, ‘‘এই যেখানে অবস্থা, সেখানে কার ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে, বকেয়া বিল চাইতে গ্রামে ঢুকবে কিংবা জরিমানা করবে?’’ সংস্থার বহু কর্মীরই ক্ষোভ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই যেখানে দায় নিতে চাইছে না বা নিরাপত্তা দিতে পারছে না, সেখানে কর্মীরা নিরুপায় হয়ে উঠছেন। অন্য দিকে চড়চড়িয়ে বা়ড়ছে বকেয়া বিলের পরিমাণ।

বকেয়া আদায়ে গিয়ে হেনস্থা হওয়ার ঘটনা যে এই প্রথম নয়, তা-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন ওই কর্মীরা। দিন কয়েক আগেও ইটিন্ডার মুকুন্দকাটি গ্রামে বকেয়া বাকি থাকায় লাইন কাটতে গেলে হেনস্থা হতে হয় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক সিনিয়র অফিসারকেও। এক রকম পালিয়ে আসতে বাধ্য হন তিনি। অথচ, সংস্থা সূত্রের খবর, বসিরহাট ডিভিশনে প্রায় ৬৭ হাজার গ্রাহকের মধ্যে বকেয়া বিল ২৮ কোটি টাকা! কিন্তু দিন দিন যা পরিস্থিতি হচ্ছে, তাতে সাহস করে সেই বিল চাইতে কিংবা লাইন কাটতে যেতে পা সরছে না কর্মীদের। পুলিশ সঙ্গে থাকলে তবু খানিকটা বুকে বল পান তাঁরা। কিন্তু সব সময়ে পুলিশকে সঙ্গে পাওয়া যায় না বলেও জানালেন অনেকে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার হাসনাবাদ-মিনাখাঁ— পাশাপাশি দুই থানা এলাকার বকচোরা, ঘোনারবন, চাপালি-সহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বহু বাড়ি, সেলাইয়ের কারখানা, মাছের ভেড়িতে হুকিং করে লাইন টানা হয়েছে। পাম্প মেশিনও চলছে সে ভাবে।

মুরারিশা চৌমাথার বণ্টন সংস্থার অফিস থেকে জানা গেল, মূলত ওই দু’টি থানা এলাকায় বর্তমানে গ্রাহক প্রায় ২৭,১০০ জন। দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা প্রায় ৫ হাজার মানুষ বিনা খরচে বিদ্যুৎ পান। আধিকারিকদের দাবি, এই এলাকায় হুকিংয়ের প্রবণতা খুব বেশি। যে সব গ্রামে বৈদ্যুতিক মেশিনে পোশাক সেলাই হয়, হাইব্রিট মাগুর মাছ চাষের জন্য মোটর ব্যবহার করা হয়, সেখানে বিদ্যুতের লম্বা বিল হয়। কোনও মতে ‘বাবা-বাছা’ করে কিছু টাকা হয় তো আসে। কিন্তু অনেক সময়েই বিল চাইতে গেলে কিংবা লাইন কেটে দেওয়ার কথা বললে বিদ্যুৎকর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়, হেনস্থা করা হয়। বসিরহাট মহকুমায় বহু সরকারি অফিসেও বহু টাকা বকেয়া আছে বলে সংস্থা সূত্রের খবর।

গ্রাহকদেরও অভিযোগ আছে। তাঁরা জানালেন, টাকা জমা দেওয়ার পরে মাসের পর মাস কেটে যায়। অথচ, নতুন মিটার মেলে না। ব্যবহার এক থাকলেও মাঝে মাঝেই লাফিয়ে বাড়ে বিল। ঝড়-ঝাপটায় লাইন খারাপ হলে অনেক সময়ে সারাতে কয়েক দিন কাটিয়ে দেন বিদ্যুৎ কর্মী।

সংস্থার কর্তাদের দাবি, কর্মী কম। সে কারণে কিছু ক্ষেত্রে দেরি হয়। কিন্তু চেষ্টা থাকে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘লোকে এত টাকা বাকি রাখবে। অথচ, ভাল পরিষেবা আশা করবে। অদ্ভূত আবদার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন