জগদ্দলে কিশোর খুনে ধৃত আরও ১
Jagaddal

দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি নিয়ে তিতিবিরক্ত মানুষ

ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া-জগদ্দলে গুলি-বোমা, খুন-জখম নতুন ঘটনা নয়।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

জগদ্দল শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

জগদ্দলে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া আব্দুল ওয়াকারকে খুনের ঘটনায় পুলিশ রবিবার রাতে একজনকে গ্রেফতার করল। তার নাম মহম্মদ তৌফিক। সে স্থানীয় বাসিন্দা। এই ঘটনায় নাম রয়েছে আরও ছ’জনের। তারা গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে।

Advertisement

গোটা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া-জগদ্দলে গুলি-বোমা, খুন-জখম নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু যে সামান্য কারণে স্কুল পড়ুয়া আব্দুলকে গুলি করে খুন করা হল, তা মেনে নিতে পারছেন না কেউ। অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে এলাকায় মিছিলও হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, সম্প্রতি রাজনৈতিক কারণে হিংসা বাড়ছে। তার ফলে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে এলাকায়। ঘটনার পরে পরেই রশিদ খাঁ নামে এক অভিযুক্তকে ধরে গণপ্রহার দিয়েছিল জনতা। সে-ও পুলিশের হেফাজতেই রয়েছে।

গত শনিবার রাতে মহরমের প্রস্তূতির জন্য ডাঙ্কা নিয়ে মিছিল করছিল ভাটপাড়া ৫ নম্বর গলির কিশোরেরা। মিছিল জগদ্দলের ৩ নম্বর গলিতে এসে পৌঁছয়। সে সময়ে চারটি বাইকে এলাকার কয়েকজন যুবক ওই রাস্তা দিয়ে পার হচ্ছিল। মিছিলে আটকে গেলে তারা রাস্তা ছেড়ে দিতে বলে। তাদের কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেছিল কিশোরের দল। তা নিয়ে বচসা, আর তার জেরেই গুলি চালিয়ে দেয় এক দুষ্কৃতী। মাথায় গুলি লেগে মৃত্যু হয় আব্দুলের।

Advertisement

দুষ্কৃতীদের কার্যকলাপ নিয়ে ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়ায় অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু গত বছরের মে মাসে লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে টানা গোলমাল চলছে এই এলাকাগুলিতে। বিজেপি ব্যারাকপুর কেন্দ্রে জেতার পর থেকেই উত্তেজনার পারদ আরও চড়ে। প্রথম দিকে তৃণমূলের পার্টি অফিস দখল, নেতাদের বাড়িতে হামলা বোমাবাজি করে এলাকা সন্ত্রস্ত করার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। মাসখানেক পরে তৃণমূল ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করতেই অশান্তি তীব্র হয়। শাসকদলের হাতছাড়া হওয়া পুরসভা এবং পার্টি অফিস পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শুরু হতেই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। তার জেরে ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়ায় মাসখানেকের বেশি বাজার বন্ধ ছিল।

পুলিশ সব রাজনৈতিক দল এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে বাজার খোলার কাজ শুরু করতেই পুলিশের উপরে হামলা হয়। সেই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। সে দিন পুলিশের গুলিতে দু’জনের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। আরও চার মাস পরে এলাকা শান্ত হওয়ার পরে দোকান বাজার খোলে। তারপরে কিছু দিন পরিস্থিতি শান্ত ছিল।

এ বছরের গোড়ার দিকে ফের শুরু হয় অশান্তি। বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় বোমাবাজি। গত মার্চ পর্যন্ত ১৬টি সংঘর্ষ এবং ৩০ বার বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে।

মার্চের শেষ দিকে লকডাউনের পরে প্রায় দু’মাস এলাকা শান্ত ছিল। জুন থেকে ফের বোমাবাজি শুরু হয়। এলাকায় এলাকায় দুষ্কৃতীদের ঘোরাঘুরি বেড়ে যায়। এরই মধ্যে তৃণমূলের এক নেতাকে গুলি করে খুনের চেষ্টা হয়। আরও এক যুবককে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। জুলাই এবং অগস্ট মাসে একাধিক জায়গা থেকে প্রচুর বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ, বম্ব স্কোয়াড।

এলাকায় অশান্তি তৈরি করা নিয়ে পরস্পরের দিকে তোপ দেগে চলেছে বিজেপি এবং তৃণমূল। স্থানীয় সাংসদ অর্জুন সিংহ বলেন, “তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে লড়তে না পেরে পুলিশ এবং দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকা দখল করতে চাইছে।” তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যামের কথায়, “সাংসদ নিজেই বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের এনে নিজের আশ্রয়ে রেখে এলাকা অশান্ত করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন