মহাপ্রভুর স্মৃতি ব্যারাকপুরের রথে

হালিশহর বৈষ্ণবদের পীঠস্থান। সার সার রথের দড়িতে টান পড়ে এখানে রথযাত্রার দিন। পাশেই নৈহাটি। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের ভিটে। এই ভিটেতেই বঙ্কিমচন্দ্রের পূর্ব পুরুষের প্রতিষ্ঠিত রাধাবল্লভ জিউ’র মন্দির।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০২:৩৮
Share:

সাজসজ্জা: ঘোষবাড়ির রথে রঙের পোঁচ। নিজস্ব চিত্র

চৈতন্যদেবের স্মৃতি বিজড়িত জনপদ। সেখানে জগন্নাথদেব পুজো ঘনঘটা করেই হবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী! ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে রথযাত্রার সমারোহ তাই নজর কাড়ার মতো। নাম সংকীর্তন, জগন্নাথদেবের পূর্ণযাত্রা, যাত্রামঙ্গল পাঠ, আরতি ও নানা অনুষ্ঠানে ভরে থাকে আট দিন।

Advertisement

বীজপুরে চৈতন্যদেবের দীক্ষাগুরু শ্রীপাদ ঈশ্বরীপুরীর ভিটে ছাড়িয়ে কিছুটা এগোলেই কৃষ্ণরাই জিউ’র মন্দির। বৈষ্ণব শিবানন্দ সেন ছিলেন বিগ্রহের প্রতিষ্ঠাতা ও সেবাইত। কষ্টি পাথরের কৃষ্ণ, অষ্টধাতুর রাধা ছাড়াও নারায়ণ শিলা, বলরামের মূর্তি আছে। ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতি বছর আষাঢ় মাসে রথযাত্রা হয় ধুমধাম করে। মাটি, প্লাস্টিকের পুতুল, পাঁপড় ভাজা, জিলিপি, গজার পসরা সাজিয়ে মেলা বসে।

হালিশহর বৈষ্ণবদের পীঠস্থান। সার সার রথের দড়িতে টান পড়ে এখানে রথযাত্রার দিন। পাশেই নৈহাটি। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের ভিটে। এই ভিটেতেই বঙ্কিমচন্দ্রের পূর্ব পুরুষের প্রতিষ্ঠিত রাধাবল্লভ জিউ’র মন্দির। এখানে রথযাত্রা হয় বেশ বড় আকারে। রথে বসেন রাধাবল্লভ। আট দিন ধরে মেলা চলে। নৈহাটি থেকে কিছুটা দূরেই শ্যামনগর আতপুর। শ্যামনগর আতপুরের ঘোষবাড়ির রথ ১২০৫ সালের। কাঠের সুদৃশ্য জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি। এই ঘোষবাড়ির রথ দেখতে ভিড় করেন দূর-দূরান্তের মানুষ। রথযাত্রা থেকে উল্টো রথ পর্যন্ত সাজানো হয় রথ। বিরাট মেলা বসে যায় রথতলায়।

Advertisement

শহর ব্যারাকপুরে তিনটি রথ বেশ বড়। একটি ঘোষপাড়া রোডে নিতাই গৌরাঙ্গ মন্দিরে। অন্যটি গঙ্গার ধারে ভোলাগিরি আশ্রমের রথ। এই রথের দড়ি টানতে এলাকার লোকজন রাস্তায় নামেন। ব্যারাকপুরে নীলগঞ্জের কাছে সাঁইবনায় রথ বেরোয়। মেলা বসে স্থানীয় রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের পাশের মাঠে। এখানে রথ সম্প্রীতির উৎসব। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন এই মেলায় ভিড় করেন। ব্যারাকপুরে অন্নপূর্ণা মন্দিরের সামনে রথের মেলা বসে ফি বছর। খড়দহে ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত শ্যামসুন্দর মন্দিরের পাশেই মহাপ্রভুর মন্দির। রথের দিন এখানে উৎসবের আয়োজন করা হয়।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে গঙ্গার ধারে আর এক জনপদ, পানিহাটি। যার আদি নাম ‘পুণ্যহট্ট’। সর্ব ধর্মের মহামিলন ঘটেছিল এই পানিহাটিতে। তবে পানিহাটি চিরকালই বৈষ্ণবদের তীর্থক্ষেত্র।

গঙ্গার ধারে রাঘব পণ্ডিতের শ্রীপাট সমাধি ছাড়াও তাঁর প্রতিষ্ঠিত ও সেবিত মদনমোহন মন্দির, শ্রীচৈতন্য মন্দির আছে। শ্রীচৈতন্যের পায়ের ছাপ সংরক্ষণ করা আছে। আছে ইস্কনের মন্দির। সুদৃশ্য রথ বেরোয় এখানেও।

বেলঘরিয়ার রথতলায় রথের মেলা বসে, বি টি রোডের ধারেই বিশালাকায় রথ বেরোয়। পাশেই বরাহনগরে শ্রীপঞ্চায়তী আখড়া মহানির্বাণী পরমহংস মঠ ও মিশনের আয়োজনে রথযাত্রা উৎসব চলবে ২৫ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন