আলোহীন: ছবি: নির্মল বসু
বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। কিন্তু নেই আলো। কোনওটা ভেঙে পড়ে রয়েছে। আবার কোথাও আলোগুলি চুরি হয়ে গিয়েছে।
বসিরহাটের মিনাখাঁয় চৈতল-মালঞ্চের ওই এক কিলোমিটার সেতু দিয়ে সন্ধ্যায় লোকজন যাওয়া-আসা করতে ভয় পান। আতঙ্কে গাড়ি চালান চালকেরাও। বিদ্যাধরী নদীর উপর ওই সেতুতে আলো লাগানোর জন্য প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এ বিষয়ে বসিরহাট পূর্ত ও সড়ক দফতরের সহকারী বাস্তুকার রানা তারন বলেন, ‘‘সেতু তৈরির দায়িত্ব ছিল আমাদের। কিন্তু সেতুর উপরে আলো জ্বালানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত কিংবা পুরসভার। বিদ্যুতের খরচও বহন করবেন তাঁরা।’’ পঞ্চায়েত জানিয়েছে, এত বড় সেতু আলোকিত করতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, তা পঞ্চায়েতের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, নষ্ট হওয়া বিদ্যুতের খুঁটি মেরামত করে তার উপরে আলো লাগানোর মতো আর্থিক ক্ষমতাও নেই পঞ্চায়েতের।
মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টাকি, হাসনাবাদ এবং হিঙ্গলগঞ্জ-সহ বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে দ্রুত কলকাতায় পৌঁছনোর জন্য সেতুটি তৈরি হয়। ২০০৫ সালে ওই সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। এতে খুব কম সময়ে কলকাতায় পৌঁছনো যায়। কিন্তু বছর ঘুরতেই সেতুর উপরে দুষ্কৃতীদের আড্ডা জমে। অসামাজিক কাজের সবিধা হবে বলে দুষ্কৃতীরা আলোগুলি চুরি করতে শুরু করে বলে অভিযোগ। কিছু ভেঙেও দেওয়া হয়। সেগুলি আর মেরামত করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পরে ওই সেতুতে মদ-গাঁজার আড্ডা বসে। ছিনতাইবাজদের উপদ্রব বাড়ে। অন্ধকার সেতু দিয়ে যেতে ভয় হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে ওই সেতু দিয়ে মহিলাদের যাওয়া বিপজ্জনক। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। পুলিশ দুষ্কৃতীদের আ়ড্ডায় অভিযান চালিয়েছে কয়েকবার। কিন্তু সেতুর অন্য দিক থেকে তারা পালিয়েছে। জরুরি প্রয়োজন থাকলেও মানুষ ভয়ে সন্ধ্যার পরে একা একা সেতু পার হন না। গাড়ির চালকেরা জানান, আলো না থাকায় প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। তাঁদের বক্তব্য, বড় কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলে বোধ হয় প্রশাসনের টনক নড়বে না। পুলিশের একাংশের দাবি, এত বড় একটি সেতুর উপরে যদি একটাও আলো না জ্বলে, তা হলে তো দুষ্কৃতীদের উপদ্রব বাড়বেই। তা ছাড়া, আলোর অভাবে দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করাও সম্ভব হয় না। এ সব কারণে এখন সন্ধ্যা নামলে আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠে মালঞ্চ সেতু।