ফাইল চিত্র।
হাওড়া স্টেশনে প্রায় সমস্ত লোকাল ট্রেন নয় বগির জায়গায় বারো বগির হয়ে গেলেও শিয়ালদহ পড়ে রয়েছে সেই মান্ধাতা আমলেই। অথচ, শিয়ালদহ থেকে বনগাঁ, বসিরহাট কিংবা দক্ষিণ ও মেন লাইনের ট্রেনের ভিড় গল্পগাথার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। তা নিয়ে হেলদোল নেই পূর্ব রেলের।
পূর্ব রেলের পরিসংখ্যানই বলছে, হাওড়ায় যখন ১০০ শতাংশ লোকাল ট্রেন বারো বগির, সেখানে শিয়ালদহে মাত্র ৬০ শতাংশ ট্রেনে বারো বগি চালু করা গিয়েছে। এর মধ্যে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় কিছু ট্রেন বারো বগির করা গেলেও মেন ও বনগাঁ-বসিরহাট শাখায় মাত্র কিছু ট্রেনই বারো বগির করা হয়েছে।
রেলের পরিসংখ্যান আরও বলছে, গত দশ বছরে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। অথচ, ট্রেন বেড়েছে হাতে গোটা কয়েকটি। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর সমস্যার জন্য বগির সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয় রেল। তিনটি অতিরিক্ত কামরা বাড়িয়ে সমস্ত ট্রেনই বারো বগি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো প্রতিটি স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণ হয়। নতুন প্ল্যাটফর্ম হকারদের দখলে চলে গিয়েছে। কিন্তু সব ট্রেনে বারো কামরা চালু হয়নি।
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিয়ালদহ থেকে মেন, দক্ষিণ, বনগাঁ ও হাসনাবাদ শাখায় আপ-ডাউন মিলিয়ে মোট ৯০২টি ট্রেন চলে। তার মধ্যে বনগাঁ শাখায় চলে প্রায় ২০০টি ট্রেন। শিয়ালদহ শাখায় যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়ে বুধবার পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “ওই শাখায় যাত্রী প্রচুর বেড়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ ট্রেন বারো কামরার হয়ে গিয়েছে। বাকি ট্রেনেও বারো কামরা করার কাজ চলছে।’’
কিন্তু কেন সব ট্রেনে চালু করা যাচ্ছে না বারো কামরা?
এ ব্যাপারে পূর্ব রেলের কর্তাদের যুক্তি, বাড়তি কামরার ট্রেন চালুর জন্য প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণ হলেও কিছু কিছু স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম নিচু হয়ে গিয়েছে। সেগুলি ঠিক করে বাড়তি বগি আনা, সিগনালিং ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং ট্রাক ‘লে-আউট’ পরিবর্তন করতে হচ্ছে। তাই এই দেরি।
এ দিকে, সব ট্রেন তো দূরের কথা, বারো কামরার ট্রেন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। সেই ক্ষোভেই বুধবার অশোকনগর স্টেশনে অবরোধ করেন যাত্রীরা। অসংখ্য মানুষ তাতে নাকাল হন। কেউ কেউ প্রবল গরমে অসুস্থও হয়ে পড়েন।
রেলপথ ছাড়া যাতায়াতের কার্যত উপায় নেই বনগাঁ বা বসিরহাট থেকে। এমনিতেই বেহাল যশোর রোড, টাকি রোড কিংবা বিটি রোড। তীব্র যানজটে ওই রাস্তা বা রোডে যাতায়াত করতে গোটা দিন পেরিয়ে যায়। বেশিরভাগ অফিস-যাত্রী তাই রেলপথকেই বেছে নেন।
ফলে বনগাঁ-শিয়ালদহ বা মেন লাইনের ট্রেনে এমনিতেই অফিসযাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় থাকে। সে সময়ে মহিলা-শিশু বা বয়স্কদের পক্ষে ট্রেনে ওঠাই দায় হয়ে পড়ে। দমদম, বিরাটি, মধ্যমগ্রাম, বারাসত বা হাবরায় ভিড় ট্রেনে ঠেলে উঠতে না পেরে একের পর এক ট্রেন ছাড়তে হয় অনেককে। প্রায় প্রতিটি ট্রেনে দু’টি কামরার মাঝখানে, জানলা ধরে ঝুলে থাকেন অনেকে। ট্রেনের মাথাতেও যাত্রীদের বসে থাকতে দেখা যায়। ট্রেনে উঠতে না পেরে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। এটাই অফিস টাইমে নিত্যদিনের চিত্র এই সব শাখায়।
প্রতি দিন ট্রেন ধরে অফিসে যাতায়াত করতে হয় মধ্যমগ্রামের বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর মতো অনেককে। অফিসের কাছাকাছি স্টেশন দমদম বলে সেখান থেকে বারাসত লোকাল ধরতেন বিশ্বজিৎ। তাঁর কথায়, ‘‘এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে ঠাসা ভিড়ের জন্য দমদম থেকে বনগাঁ, হাসনাবাদ তো দূরের কথা বারাসত লোকালেও ওঠা যায় না। বয়স হচ্ছে। বাধ্য হয়ে উল্টো দিকে শিয়ালদহে গিয়ে ট্রেন ধরি। অনেক সময়ও নষ্ট হয় তাতে।’’
এমন অভিজ্ঞতা এই লাইনে যাতায়াত করা আরও অনেকের।