—প্রতীকী ছবি।
এ যেন ভূত সর্ষের ভিতরেই!
বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের সদস্য লাবণ্য সর্দার ঠিক এই কাণ্ডটাই ঘটাতে চলেছিলেন। তাঁর মেয়ের বয়স সতেরো বছর। তাঁরই বিয়ের তোড়জোড় চলছিল বৃহস্পতিবার রাতে। কয়েক ঘণ্টা আগে সেখানে হাজির হয় পুলিশ। থামানো গিয়েছে বিয়ে। লজ্জিত পঞ্চায়েত সদস্য। বলেছেন, ‘‘আঠারো বছরের নীচে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায় না জানি। কিন্তু নানা সমস্যায় পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। আর এমন ভুল করব না।’’
বিয়ের খবর এসেছিল ক্যানিং চাইল্ড লাইনের কাছে। সেই মতো বাসন্তী থানার পুলিশ, ব্লক প্রশাসনের কর্তা ও চাইল্ড লাইনের সদস্যেরা পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি পৌঁছন।
সেখানে গিয়ে অপ্রস্তুত আধিকারিকেরা। বাড়ি ভর্তি লোক। কিন্তু তাঁরা নাকি সকলে এসেছেন এক আত্মীয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে। কিন্তু তখন সন্ধে হয় হয়। বাড়ির লোকজন জানান, দিনের বেলা শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের অনেকে থেকে গিয়েছেন। তাঁদের রাতের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু নিমন্ত্রিতদের বেশভূষা দেখে অফিসারদের সন্দেহ হয়, এ যেন ঠিক শ্রাদ্ধবাসর নয়।
বাসন্তী থানার ওসি সত্যব্রত ভট্টাচার্য হাঁক পাড়েন, বাড়িতে মনে হচ্ছে বিয়ে হচ্ছে। বাসন্তীর বিডিও কল্লোল বিশ্বাসের তখনও সন্দেহ যায়নি। তিনি জানতে চান, এটা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িই তো?
ইতিমধ্যে ভিড়ের মধ্যে থেকে এগিয়ে এসে কেউ কেউ জানিয়ে যান, দিনের বেলা শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল ঠিকই, কিন্তু রাতে বিয়ের কথা পঞ্চায়েত সদস্যের নাবালিকা মেয়ের। অর্থাৎ, প্রশাসনের কানে যে কথাটা গিয়েছিল, সেটা পাকা।
বর-কনের খোঁজ পড়ে। মেয়ের বাড়ির লোকজন দাবি করেন, বিয়ে কারও হচ্ছে না। খবরটা ভুল। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা এ বার ডেকে পাঠায় মেয়েকে। সে স্বীকার করে, রাতে তারই বিয়ের কথা। মেয়ের জন্মের শংসাপত্রে দেখা যায়, বয়স মাত্র সতেরো।
খোঁজ পড়ে বরের। ততক্ষণে সে বিয়ের পোশাক বদলে ফেলেছে। কিন্তু ব্যাপারটা তখন আর ঢেকে রাখার উপায় নেই। পাত্র-পাত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁরা মুচলেকা দিয়ে জানান, নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেবেন না। পুলিশ মেয়েটিকে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘চারদিকে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে প্রচার চলছে। সরকার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্প চালু হয়েছে। এই অবস্থায় একজন জনপ্রতিনিধি যদি নাবালিকার বিয়ে দিতে চান, তা হলে বিষয়টি খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’
পঞ্চায়েতের প্রধান ইউসুফ মোল্লারও সব শুনে চোখ কপালে। তাঁর দাবি, ‘‘ওই বাড়িতে দুপুরে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। সেখানে আমিও গিয়েছিলাম। কিন্তু তখনও তো ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি, রাতে মেয়ের বিয়ে আছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কোনও মতেই নাবালিকার বিয়ে সমর্থন করি না। যারা এমন কাজ করবে, প্রশাসনকে বলব আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।’’